ধানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খোলা বাজারে নানা জাতের চালের দাম। ধান এবং চালের দামের ব্যবধানে চাতাল ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফলে রাণীনগরে প্রায় ৮০টি হাসকিং চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। মিলাররা বলছে, বাজারে ধানের আমদানি কম এবং দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাল উৎপাদনে যে খরচ পড়ছে বর্তমান বাজার মূল্যে বিক্রি করতে গিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে। মিল চালু এবং শ্রমিকদের টিকিয়ে রাখতে লোকসান হলেও এখনো ২০টি মিল চালু রয়েছে। ইরি-বোরো মৌসুমে ৩২টি মিল সরকারের খাদ্য গুদামে চাল দেয়ার চুক্তি বদ্ধ হলেও বাজার মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দুই জন চুক্তিবদ্ধ চাউলকল মালিক সরকারের খাদ্য গুদামে চাল দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে খাদ্য বিভাগের পক্ষ থেকে চাতাল ব্যবসায়ী মালিকের বিরুদ্ধে নানা সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা নিলেও তা কোনো কাজে আসে নাই। বোরো মৌসুমে চাল কিনতে পারলেও ধান সংগ্রহে পুরোটাই ব্যর্থ হয়েছেখাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, গত ইরি-বোরো মৌসুমে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছিল। সরকার ঘোষিত নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজার মূল্য সব সময় বেশি থাকায় মৌসুমের শুরুতেই ইরি-বোরো ধান নানা জাত ভেদে প্রতিমন ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকা দামে বেচাকেনা হলেও বর্তমান সেই ধানেই প্রতিমন ১৬০০-থেকে ১৬৩০ টাকা দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ভরপুর ধান কাটা মাড়াই শুরু না হওয়ায় ধানের চাহিদা বেশি থাকায় বর্তমানে ধানের বাজার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়িয়ে চলছে। উপজেলার আবাদপুকুর হাটে দেখা যায় জিরা জাতের ধান গত এক সপ্তাহ আগে ১৫২০ টাকা মণে বিক্রি হলেও গতকাল সোমবার ১৬৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়। কাটারি ভোগ জাতের ধানও প্রায় একই দারে বেচা-কেনা হচ্ছে। গত ইরি-বোরো মৌসুমে রাণীনগর উপজেলায় ৪৫ টাকা কেজি দরে ২ হাজার ৩৭৬ টন সিদ্ধ চাল এবং ৪৪ টাকা কেজি দরে ৪৮ টন আতপ চাল সংগ্রহ, ৩২ টাকা কেজি দরে ১ হাজার ৮৬৮ টন ধান কেনার বরাদ্দ পায় রাণীনগর খাদ্য বিভাগ। গত মে মাস থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করেন তারা। খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহের জন্য উপজেলা খাদ্য বিভাগের সাথে ৩২ জন মিলার চুক্তিবদ্ধ করেন। এসব ধান-চাল সরবরাহে সরকারিভাবে নির্ধারিত সময় সীমা বেধে দেয়া হয় ৩১আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ২ হাজার ৩৭৬ টন চালের মধ্যে মিলাররা সরবরাহ করেন ১ হাজার ৯৩৭ টন। এতে ৪৩৯ টন চাল সংগ্রহ ঘার্তি থাকে। এ ছাড়া বরাদ্দকৃত ৪৮ টন আতব চালের মধ্যে ১ টন চালও সরবরাহ করেননি মিলাররা। অন্য দিকে ধান সংগ্রহে সরাসরি কৃষকদের নিকট থেকে এক হাজার ৮৬৮ টন ধানের মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৫৫১.৩৬০ টন। ফলে ধান সংগ্রহ অভিযান চরম ভাবে ব্যহত হয়েছে। উপজেলার চাউল কলের সত্বাধিকারী শ্রী মিলন শাহ্ জানান, ধানের বাজার দিন দিন বেড়েই চলছে। এই বাড়তি মূল্যে ধান কিনে মিল চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। ১৬৩০ টাকা মনে ধান কিনে চাল বের করতে গিয়ে যে খরচ হচ্ছে বাজারে সেই চাল বিক্রি করে প্রতি মনে লোকসান গুনতে হচ্ছে। তারপরও শ্রমিকদের টিকে রাখতে কিছু চালের খুদ আর ধানের গুড়া বিক্রি করে কিছুটা শ্রমিক টিকিয়ে রাখার সহায়ক হচ্ছে। তবে ধানের বাজার মূল্য যে ভাবে বাড়ছে চালের দাম সেই গতিতে বাড়ছে না। এই ভাবে বাজার এলো মেলো হতে থাকলে হয়তো আমার মিলও বন্ধ করে দিতে হবে। রাণীনগর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওবাইদুর রহমান জানান, বর্তমান মৌসুম শেষের কারণে বাজারে তেমন ধান আমদানি হচ্ছে না। যার কারণে ধানের বাজার কিছুটা চড়াও। তবে বাজারে নতুন ধান পুরোপুরি উঠতে শুরু হলে ধানের দর নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলছেন এই কর্মকর্তা।