ভোলায় হাঁস পালনে স্বাবলম্বী ১৫ হাজার পরিবার
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ফরহাদ হোসেন, ভোলা
ভোলায় বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালনে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। খামার পদ্ধতিতে হাঁস পালনে বদলেছে বহু মানুষের ভাগ্য। স্বল্প পরিশ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় অনেকেই এ দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে চরাঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে হাঁস পালন ব্যাপক সম্প্রসারণ লাভ করেছে।
জেলায় ১৫ হাজারের বেশি পরিবার হাঁস পালনকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। এমন কোন বাড়ি খোজে পাওয়া যাবে না যে বাড়িতে বড় ও ছোট পরিসরে হাঁস পালন করা হয় না। জেলার সাত উপজেলার গ্রামে গ্রামে মাংস ও ডিমের চাহিদা মেটাতে যুগ যুগ ধরে পারিবারিকভাবে হাঁস পালন হয়ে আসছে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে স্থানীয়ভাবে মাংসের প্রচুর চাহিদা থাকায় দিন দিন বাণিজ্যিকভাবে হাঁসের খামার গড়ে উঠতে শুরু করে। বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলগুলোতে প্রচুর বিলাঞ্চল ও সমতল জমি থাকায় হাঁস প্রতিপালন অনেকটাই সহজ।
চারদিকে নদী-খাল-বিল থাকায় প্রচুর শামুকসহ প্রাকৃতিক খাবার পাওয়া যায় এখানে। যা হাঁসের প্রধান খাদ্য। চরের মাঠে-ঘাটে দল বেধে ছুটে চলে শত শত হাঁস। এর মাধ্যমে দারিদ্রতাকে জয় করে স্বচ্ছলতা ফিরে পেয়েছে বহু পরিবার। চরগুলোতে সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে শত শত হাঁসের খামার। এসব খামারে উৎপাদিত ডিম গ্রামের হাট-বাজার হয়ে চলে যায় শহরের দোকানগুলোতে। এ ছাড়া হাঁসের ডিম দেয়া শেষ হলে মাংসের জন্য বিক্রি হয় বিভিন্ন বাজারে। শীতের আগমনে হাঁসের দামও থাকে চওড়া।
এসময় হাঁসের মাংসের কেজি ৪০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। শীতের সময় ফিরনি, পিঠাণ্ডপুলি খাওয়ার পাশাপাশি হাঁসের মাংস খাওয়া নিয়ে রীতিমতো উৎসবে মুখরিত থাকে পুরো জেলার মানুষ। বিভিন্ন জায়গায় হাঁসের হ্যাচারি গড়ে উঠলেও ঘরোয়াভাবে লালন করা ‘দেশি হাঁস’ বলে খ্যাত হাঁসই সবার কাছে খুব প্রিয়। দেশে বিভিন্ন জাতের হাঁস থাকলেও শীতে পাতি হাঁসের মাংস খেতে সুস্বাদু। এ জেলায় আসা পর্যটকদের কাছে হাঁসের মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
শীত এলেই এখানে হাঁস খাওয়ার ধুম পরে। বাড়িতে আসা মেহমানদের আপ্পায়নে হাঁসের মাংস আর মহিষের টক দই যেন প্রথা হয়ে দাড়িয়েছে। পিকনিক অথবা বন্ধুবান্ধবের আনন্দো ভোজন হাঁসের মাংস ছাড়া পূর্ণতা পায় না। সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল চটকিমারায় ধান খেত থেকে শুরু করে নদী-খাল-নালা-ডোবায় শত শত হাঁস ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরা মূলত প্রাকৃতিক খাবার বেশি খায়।
মাঝে মাঝে খামারিরা ধান ছিটিয়ে দিচ্ছে। খামারি ইউছুফ ফরাজী ও ছাদেক আলী জানান, ৫ বছর আগে ২০০ হাঁস দিয়ে খামার শুরু করেন তারা। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাদের। বর্তমানে প্রায় এক হাজারের বেশি হাঁস রয়েছে তাদের খামারে। দৈনিক সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে ৩ হাজার টাকার বেশি লাভ থাকে ডিম বিক্রি করে। হাঁস খামারি আলাউদ্দিন মিয়া জানান, ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে হাঁস পালন করে আসছেন।
বসত ঘরের পাশের জমিতে গড়ে তুলেছেন হাঁসের খামার। প্রথমে ১০০ হাঁস দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে তার প্রায় ৭০০ হাঁস রয়েছে। দৈনিক প্রায় সাড়ে ৪০০ ডিম হয় তার খামারে। ১০০ ডিম ১৫০০ টাকা মূল্য হারে তার ৭ হাজার টাকার ডিম বিক্রি হয় দৈনিক। অন্যান্য ব্যয় বাদ দিয়ে তার ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা লাভ হয়। শুধু চর চটকিমারা নয়, ভেলুমিয়া চর, কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চর, ভেদুরীয়ার চর গাজী, ধনীয়া, রাজাপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের চরে হাঁস পালন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। হাঁসের খামারে কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অংশ গ্রহণ করছে। মাঝের চরের খামারি জোছনা বেগম জানান, তার স্বামী কৃষি কাজ করেন।
তার খামারে ৬০০ হাঁস রয়েছে। তিনি ছেলেকে নিয়ে খামার পরিচালনা করেন। হাঁস পালনে তেমন পরিশ্রম হয় না জানিয়ে বলেন, সকালে এসব হাঁস তার ছেলে বিল ও নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে দলবদ্ধ ভাবে শামুক, ছোটমাছসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক খামার খায় তারা। সন্ধ্যার আগে আবার খামারে নিয়ে আসা হয়।
তারপরেও দিনে ২ বার করে তাদের খাবার হিসেবে ধান দিতে হয়। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম খাঁন বলেন, জেলার সাত উপজেলায় ৫২১টি বড় খামার ও মাজারি এবং ছোট সব মিলিয়ে ১৫ হাজারের অধিক পারিবারে ২৪ লক্ষ ৪১ হাজার হাঁস রয়েছে। একটি উন্নত জাতের হাঁস বছরে ২৫০ থেকে পৌনে ৩০০ ডিম দেয়। এসব খামারিদের সাথে উঠোন বৈঠক, সেমিনার, প্রশিক্ষণ ও প্রচার পত্র বিলি ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। বহু যুবক হাঁস পালনের মাধ্যমে তাদের বেকারত্ব দূর করছে।