ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিলুপ্তির পথে কাচারিঘর

দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিলুপ্তির পথে কাচারিঘর

এক সময় কাচারি ঘর ছিল গ্রামের আভিজাত্যের প্রতীক। অধিকাংশ বাড়িতে থাকতো এ কাচারি ঘর। আর কাচারি ঘরকে বাড়ির সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য বাড়ি বলে ধরা হতো। বাড়ির বাহিরের আঙিনায় দরজার মাথায় অতিথি, মুসাফির, ছাত্র ও জায়গিরদের থাকার এই ঘরটিকে কাচারি ঘর নামে চিনতেন এলাকাবাসী।

কাচারি ঘরটি বাড়ির দরজায় ঘাটলার কাছে স্থাপন করায় বাড়ির সৌন্দর্য অনেকাংশে বেড়ে যেত। কাচারি ঘরে অতিথি, পথচারী, মুসাফির, বাড়ির ছেলেরা রাতযাপন করতেন। যে কারণে সেই সময় রাতের বেলায় বাড়িতে চুরি-ডাকাতি কম হতো বলে অনেকে মত দেন। কাচারিতে বাড়ির স্কুল কলেজগামী ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করতেন পাশাপাশি সকাল বেলা এটি মোক্তব হিসেবে ব্যবহার হতো। আধুনিকতার, ডিজিটাল ও স্মাটের ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি কালচার অস্তিত্ব হারিয়ে বাড়ির সৌন্দর্য কাচারি ঘর এখন আর চোখে পড়ে না প্রায় বিলুপ্তির পথে।

জানা গেছে, ঈশা খাঁর আমলে কর্মচারীরা বাড়ির দরজায় অবস্থিত কাচারি ঘরে বসে খাজনা আদায় করতেন। যখন দেশে জমিদারী প্রথা যখন চালু ছিল তখনো গ্রামের প্রভাবশালী মোড়লদের বাড়ির দরজায় কাচারিতে বসে খাজনা আদায় করা হতো। শালিস বিচারসহ গ্রামের সব সামাজিক কাজগুলি পরিচালিত হতো কাচারি ঘরে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইট-পাথরের গাঁথুনিতে একেবারেই বিলুপ্তির পথে কাচারি ঘর। জেলার ৭টি উপজেলার ৫টি পৌর সভা ও ৭২টি ইউনিয়নের মধ্যে হাতেগণা কয়েকটি বাড়িতে কাচারি ঘর দেখা গেলেও তা রয়েছে অযত্নে-অবহেলায় পরিত্যাক্ত অবস্থায়। নেই আর কাচারি ঘরে সেই চিরচেনা শিক্ষার্থীদের পড়া আওয়াজ, রাতের বেলায় জারীগান, লুডু খেলা অতিথিদের গল্প-আড্ডা, সকাল বেলায় মোক্তবে আরবি পড়ার মধুর সুর। এখন আর দিনের বেলায় কাজের শ্রমিকদের ক্লান্তি দূর করতে বিশ্রাম নিতে দেখা যায় না কাচারি ঘরে। কোথাও কোথাও এক সময়ে বাড়ির সৌন্দর্য কাচারি ঘর অযত্ন আর অবহেলার কারণে এখন গোয়াল ঘরে পরিনত হয়েছে। লালমোহনের মিয়া বাড়ির নজরুল ইসলাম বলেন, আমার পিতা জীবিত থাকতে আমাদের বাড়ির দরজায় অবস্থিত কাচারি ঘরটি প্রতি বছর মেরামত করতেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর থেকে কাচারি ঘরটি আর মেরামত তেমন একটা হয়। কোন কার্যক্রমও নেই। সময়ের পরিক্রমায় যে স্মৃতি কাচারি ঘরটি আছে সেটিও কখন যে হারিয়ে যাবে তা এখন দেখার বিষয়। চাঁদপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জোসেব মিয়া বলেন, দেশ আধুনিক পরে ডিজিটাল ও স্মাটের ছোঁয়ায় এক সময়কার গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কাচারি ঘর প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবুও পূর্ব পুরুষদের স্মৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে কিছু বাড়িতে শুধুমাত্র কাচারি ঘর রয়েছে। কিন্তু কাচারি ঘর থাকলেও কোনো কার্যক্রম এখন চলমান নেই। ঘরগুলো রয়েছে পরিত্যক্ত অবস্থায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত