অতি বৃষ্টি, নদ-নদী এবং অপরিকল্পিত মাছের ঘেরের উপচেপড়া পানিতে যশোরের কেশবপুরে ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ১০৪টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। মানুষের ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। মানুষ টংঘর বেঁধে আশ্রয় নিয়েছেন যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের পাশে। পানি নিষ্কাশনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড এরইমধ্যে হরিহর, বুড়িভদ্রা, আপার ভদ্রা ও শ্রী-হরি নদীর পলি অপসারণের কাজ শুরু করলেও পানি সরার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শত শত মাছ ব্যবসায়ী ঘের মালিকরা জমির মালিক কৃষকদের নিকট থেকে জোরপূর্বক পানি নিষ্কাশের নামে বিঘাপ্রতি এক হাজার টাকা করে নিয়ে সেচ প্রকল্প নামে সাতটি সেচ গড়ে তুলেছে। যা নিয়ে কৃষকদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
আগামী বোরো মৌসুমে কৃষকরা যাতে আবাদের সুযোগ পান, তাকে পুঁজি করে মৎস্য ঘের মালিক ও এলাকার কিছু স্বার্থানেষী মহল বিভিন্ন স্লুইস গেটের মুখে সেচ পাম্প দিয়ে পানি সেচ প্রকল্প চালু করেছেন। আর এই সেচ প্রকল্পের খরচ নির্বাহ করতে জমির মালিক পক্ষের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচোনা ছাড়াই জমির মালিকদের বিঘাপ্রতি এক হাজার টাকা প্রদান করতে হবে। কোনো জমির মালিক টাকা দিতে ব্যার্থ হলে জমির হারির টাকা থেকে কেটে নেয়া হবে বলে প্রচারণা চলছে। এখবরে এলাকায় জমির মালিকদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে উপজেলার ৭টি পয়েন্টে সেচ পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন প্রকল্প শুরু হয়েছে। উপজেলা মঙ্গলকোট ইউনিয়নের বড়েঙ্গা গ্রামের কৃষক তাইফুর ইসলাম জানান, আমার পরিবারে ১০০ বিঘার অধিক জমি রয়েছে।
সেচ কমিটির পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ না করেই বিলের পানি নিষ্কাশনে বড়েঙ্গা স্লুইস গেটের মাঁথায় সেচ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাঁজিয়া ইউনিয়নের গড়ভাঙ্গা গ্রামের আজিজুর রহমান জানান, ২৭ বিলে তার জমি রয়েছে। জামির পানি সেচের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু জমির মালিকের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়ায় বিলের পানি সেচ শুরু করেছেন। সেঁচ কমিটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যে টাকা খরচ হবে তার অর্ধেক টাকা জমির মালিককে বহন করতে হবে। একইভাবে বুড়ুলি স্লুইস গেটের মুখে ২৭ বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য সুফলাকাঠি ইউনিয়নের ডহুরি বিলের ৮ ব্যান্ড স্লুইস গেটের মুখে সেচ পাম্প স্থাপন করে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একইভাবে ভরত ভায়না বিলে গেটের মাথায় ইলেকট্রিক সেচ মটর স্থাপন করে পানি নিষ্কাশন শুরু হয়েছে। পানি নিষ্কাশন সেচ কমিটির সদস্যসচিব ইউপি চেয়ারম্যান এস এম মুনজুর রহমান বলেন, উপজেলার মঙ্গলকোট ইউনিয়ন এবং সুফলাকাঠি ইউনিয়নের একাংশের পানি নিষ্কাশনের জন্য বুড়ুলি গেটের মাথায় আগামী বোরো মৌসুমে বিলগুলোতে যাতে ধানের আবাদ করা যায় সেই লক্ষে আমরা সেচ কার্যক্রম শুরু করেছি। এখানে যে টাকা খরচ হবে তার অর্ধেক ঘের ব্যবসায়ীরা দেবেন এবং বাকি অর্ধেক জমির মালিকের নিকট থেকে নেয়া হবে।
এ বিষয়ে কিছু কিছু জমির মালিকের সাথে কথা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি জমির মালিকদের সাথে আলাপ আলোচনা করা হবে। কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন বলেন, স্থায়ী পানি বদ্ধতার হাত থেকে মুক্ত হয়ে আগামী বোরো মৌসুমে যাতে বিলগুলোতে কৃষক ধানের চাষ করতে পারেন, সেজন্য বিভিন্ন সেচ প্রকল্প করে বিলের পানি নিষ্কাশন শুরু হয়েছে। এ নিয়ে কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। বিলগুলোর পানি নিষ্কাশনে এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সহযোগিতা বা বরাদ্দ আসেনি। যতটুকু জানা গেছে এলাকার ঘের ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে এই পানি নিষ্কাশন শুরু হয়েছে।