টাঙ্গাইলের পাঁচ নেতার নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা

প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রঞ্জন কৃষ্ণ পণ্ডিত, টাঙ্গাইল

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন টাঙ্গাইলের সাবেক এমপি তানভীর হাসান ছোট মনিরসহ পাঁচ আওয়ামী লীগ নেতা। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ খানের দক্ষিণ মোল্লার টেকের কাজী মনিরের মেয়ে তাছলিমা কাজী অভিযোগটি দাখিল করেন। মামলায় অভিযুক্ত ২৩৮ জনের মধ্যে টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি তানভীর হাসান ছোট মনির, পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর সাইফুজ্জামান সোহেল ও আমিনুর রহমান আমিন ওরফে ক্যাডার আমিন আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগের অর্থ যোগানদাতা ভূঞাপুরের ছাব্বিশা এলাকার ব্যবসায়ী নেতা ফজলু মল্লিক ও ক্যাডার বাবলু শেখ প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শেষের দুজনের মধ্যে ফজলু মল্লিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে(দুদক) আওয়ামী লীগের শাসনামলে অবৈধ পন্থায় ডিস লাইনের কর্মচারী থেকে শতকোটি টাকা আয় করার অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। ঠিকাদারী লাইসেন্সে নামকাওয়াস্তে কাজ দেখিয়ে শতকোটি টাকা অনিয়মের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের তদন্ত চেয়ে তার বিরুদ্ধে গত ২৯ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ করা হয়। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার তানভীর, মোমেন সরকার ও টাঙ্গাইল শহরের সোনিয়া আক্তার সহ পাঁচজন ওই লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। দুদকে দেয়া লিখিত অভিযোগে প্রকাশ, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ছাব্বিশা গ্রামের ফয়েজ ওরফে ফায়েজ মল্লিকের ছেলে ফজলু মল্লিক ১/১১-এর সময় ডিস লাইনের বিল তোলার কর্মচারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হলে তিনি ‘আলাদিনের চেরাগ’ পেয়ে যান। আওয়ামী লীগের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে তিনি ব্যবসায়ীক নানা সুযোগ খুঁজতে থাকেন এবং পেয়েও যান। এক পর্যায়ে তার মামাতো ভাই উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম রফিককে উপজেলার অলোয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন করান এবং নানা পলিসি করে নির্বাচিত করেন। মামাতো ভাইয়ের সূত্র ধরে স্থানীয় সংসদ সদস্য(সাবেক) তানভীর হাসান ছোট মনির ঘনিষ্ঠজনে পরিণত হন। এরপর তিনি কৌশলগত কারণে মামাতো ভাই রফিকুল ইসলাম রফিককে দিয়ে বালু মহল চালানো এবং নানা রকম ভুয়া প্রকল্প তৈরি ও কাজ পেয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে অর্থ আত্মসাতের প্রয়াস পান।

ওই সময় তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির লাইসেন্সে কাজ নিয়ে নিজেই করেন। এছাড়া বিভিন্ন ব্যবসার পাশাপাশি অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক বনে যান। অপরদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়েরকৃত মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়- ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে দমন করার জন্য গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চ মহল থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সরকারি দল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগসহ তাদের অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাসীদেরকে সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর লেলিয়ে দেয়।

তাদের হামলায় রাজধানী ঢাকার উত্তরা মডেল টাউনের জসিম উদ্দিন ফ্লাইওভারের আশপাশে হতাহতের ঘটনা ঘটে। সূত্রমতে, এদিন উত্তাল ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে উত্তরার জসিম উদ্দিন ফ্লাইওভারের ওপরে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে আরও অজ্ঞাত ৪০-৫০ জন লোক সমবেত হতে থাকে। তখন উত্তর দিক থেকে আসা কালো মাইক্রোবাস থেকে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি তানভীর হাসান ছোট মনির, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান সোহেল, সাবেক কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম আমিন ওরফে ক্যাডার আমিন, জেলার ভূঞাপুরের ব্যবসায়ী ফজলু মল্লিক ও অস্ত্রধারী ক্যাডার বাবলু শেখ স্বশস্ত্র অবস্থায় নামেন। এরপর দক্ষিণ দিক থেকে একটি সাদা প্রাইভেট কার নিয়ে সাবেক ডিবি প্রধান মো. হারুন অর রশিদ ফ্লাইওভারের ওপরে নামেন। সেখানে নেমেই তিনি পুলিশ সদস্যদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মিছিলে গুলি করতে হুকুম দেন। তখন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে থাকা সবাই মিছিলের ওপর গুলি চালায়। হারুন অর রশিদের পর পর ছোঁড়া দুটি গুলি মিছিলে অংশ নেয়া জসিমের পায়ে হাঁটুর একটু উপরে বিদ্ধ হয়। আহত জসিম উদ্দিনকে সতীর্থরা উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসার পরও পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় পরদিন ৬ আগস্ট (মঙ্গলবার) দুপুর ৩টার দিকে জসিম উদ্দিনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় নিহত জসিম উদ্দিনের চাচাতো বোন তাছলিমা কাজী বাদী হয়ে উল্লেখিত ব্যক্তিরাসহ ২৩৮ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও অন্যান্য ব্যক্তিদের আসামি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৯৭৩-এর ৩(২)/৪(১)/৪(২) ধারায় অপরাধ ও গণহত্যার অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মামলা করেছেন।