কুমিল্লার তিতাসে রঘুনাথপুর থেকে কালিপুর যাওয়ার পথে খালের উপর সেতু নির্মাণ না হওয়ায় ছয় গ্রামের মানুষকে সারা বছর বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। প্রতি বছর নিজেদের উদ্যোগে সাঁকো নির্মাণ করা হলেও পাকা সেতু নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। চার বছর আগে একটি সেতু বরাদ্দ হলেও ঠিকাদারের অনিহায় তা অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এ এলাকার মানুষ। সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার ভিটিকান্দি ইউনিয়নের রঘুনাথপুর আনন্দ বাজার থেকে দানু মুন্সির বাড়ি পর্যন্ত পাকা রাস্তা রয়েছে।
এর পর গ্রাম সংলগ্ন খাল। খালের উপর বাঁশের সাঁকো। সাঁকোটি সারা বছর ব্যবহৃত হয় বিধায় বাঁশ বিছিয়ে বাঁধানো হয়েছে। এটি দিয়েই মূলত কালিপুর, দড়িকান্দি, মানিককান্দি ও হাইধরকান্দি গ্রামের শত শত লোক প্রতিদিন আনন্দ বাজারে আসে। এপথেই তাদের আসতে হয় আসমানিয়া বাজারে।
বিশেষ করে খলিলাবাদ, রঘুনাথপুর, রঘুনাথপুর নয়ানী ও রঘুনাথপুর সাতানী গ্রামের লোকজন যাতায়াতসহ মাঠ থেকে ফসল আনার ক্ষেত্রে সাঁকোটি ব্যবহার করে থাকে। কালিপুর ও রঘুনাথপুর গ্রামবাসীর যৌথ উদ্যোগে প্রতি বছর সাঁকোটি মেরামত করা হয়। একাজে ব্যায় হয় প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে গ্রামীণ রাস্তায় কম-বেশি ১৫মি. দৈর্ঘ্যরে সেতু/কালর্ভাট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় রঘুনাথপুর আনন্দ বাজার রাস্তার দানু মুন্সির বাড়ির উত্তর পার্শ্বে খালের উপর ৩৬ ফুট দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণ অনুমোদন পায়। যার ব্যায় ধরা হয়েছিল ৩০ লাখ ৭০ হাজার ৯৪৮ টাকা। তাৎকালিন সময়ে উক্ত স্থানে পানি থাকায় ঠিকাদার সেতুটি নির্মাণে অনিহা প্রকাশ করেন।
পরবর্তীতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সভার মাধ্যমে সেতুটির নির্মাণ স্থান পরিবর্তন করা হয়। পরে উক্ত সেতুটি একই ইউনিয়নের মানিককান্দি মোল্লা বাড়ি এতিমখানা সংলগ্ন ভরা নদীর উপর নির্মাণ করা হয়। কালিপুর গ্রামের প্রবীন ব্যক্তি আজগর আলী বলেন, কালিপুর গ্রামে কোন হাইস্কুল নেই। শিক্ষাগ্রহণের জন্য ছেলেমেয়েদের যেতে হয় ছালিয়াকান্দি বাজার অথবা আসমানিয়া বাজারে। এই দুটি বাজারে যেতে হলে আমাদের সাঁকোটি ছাড়া কোন উপায় নেই। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সালাহউদ্দিন বলেন, চার বছর আগে এখানে সেতু বরাদ্দ হয়েছিল। পরে সেতুটি অন্যস্থানে স্থাপন করা হয়েছে। কালিপুর ও তার আশেপাশের লোকজনের যাতায়াতের কষ্ট আর লাঘুব হলো না। সেতু নির্মাণের কোনো অগ্রগতি দেখছি না। রঘুনাথপুর গ্রামের আম্বিয়া বেগম বলেন, রঘুনাথপুর ও কালিপুর গ্রামের মধ্যে আমাদের অনেক আত্মীয় রয়েছে। একে অন্যের প্রয়োজনে এগ্রাম থেকে ঔগ্রামে যেতে হয়। অনেক জায়গায় ব্রিজ হয়েছে এখানে ব্রিজ হয় না। আমাদের কষ্ট করে সাঁকো পার হয়ে যেতে হয়। কালিপুর গ্রামের ডা. মো. রমিজ উদ্দিন বলেন, মানিককান্দি, দড়িকান্দি ও হাইধরকান্দি লোকজন যদি রঘুনাথপুর বা খলিলাবাদ আসতে চায় তাহলে তারা এ সাঁকোটি ব্যবহার করে। সেতু না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে বৃদ্ধ ও মহিলাদের যাতায়াত করতে হয়।
উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, এটি মূলত গ্রামীণ রাস্তা। তবে এলজিইডির আওতাভুক্ত নয়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি নতুন এসেছি। আমি সরেজমিনে কালিপুর গ্রামে যাবো। বিষয়টি দেখে প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা নেব। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমাইয়া মমিন বলেন, আমি সরেজমিনে স্থানটি পরিদর্শন করে এলাকার সুশীল প্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে যাতে ওইস্থানে স্থানে সেতু নির্মাণ করা যায় সে পদক্ষেপ নেয়া হবে।