শীতের আমেজ শুরুতেই সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে খেজুর রস সংগ্রহে খেজুরগাছ প্রস্তুত করা শুরু হয়েছে। এতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ অঞ্চলের গাছিরা। সিরাজগঞ্জে সপ্তাহ ধরে অনেক এলাকায় বিশেষ করে ভোর রাতে ঘন কুয়াশা পড়ে এবং শীতের আমেজও পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ আমেজ শুরুতেই এ জেলার বিভিন্ন গ্রামঞ্চলে গাছিরা খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের পদ্ধতিতে খেজুরগাছের মাথা ডাল কেটে পরিষ্কার করা হয় এবং সাদা অংশ বের করে ২-১ দিন রোদে শুকাতে হয়। আবারো সাদা অংশ কেটে বাঁশের নলি সংযুক্ত করতে হয় এবং সেই নলিতে ছোট-বড় হাঁড়ি ও কলসি বেঁধে রস সংগ্রহ করা হয়। ঐতিহাসিক চলনবিল এলাকার সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামঞ্চলে সবচেয়ে বেশি এ খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছে গাছিরা। প্রতিবছরের ন্যায় এবারো চলনবিল অঞ্চলে মাঠে নেমেছেন গাছিরা এবং জেলার অনান্য উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এ প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এ খেজুরগাছ বাড়ির আঙিনা, জমির আইল, পুকুরপাড়সহ সড়কের ধারে লাগানো হয়ে থাকে। স্থানীয় গাছিরা রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, বিশেষ করে শীতকালের কার্তিক মাসে রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছগুলো প্রস্তুত করতে হয়। তবে এবার শীতের আগমন শুরুতেই গাছ প্রস্তুত করা হচ্ছে। রস সংগ্রহের জন্য সাধারণত ৮ থেকে ১০ লিটার ধারণ ক্ষমতার মাটির হাঁড়ি ও কলসি ব্যবহার করা হয়। শীত থাকা পর্যন্ত খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যায়। প্রতিদিন একটি গাছ থকে ৩ থেকে ৮ লিটার পর্যন্ত রস সংগ্রহ করা যায়। এ রস সংগ্রহে ৩ দিনের পর পরবর্তী ৩ দিন রস সংগ্রহ করা যাবে না। বিকাল থেকে রস সংগ্রহের জন্য গাছে গাছে হাঁড়ি বাঁধা হয় এবং ভোরে হাঁড়ি ও কলসি নামিয়ে রস সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। এ রস দিয়ে সুস্বাদু পাটালি গুড় তৈরি করা হয় এবং গ্রাম ও শহর বন্দরে এ রস বিক্রি করা হয়। এ লাভজনক রস সংগ্রহ বিক্রির ব্যবসায় এ অঞ্চলে বহু গরিব ও অসহায় মানুষ জিবীকা নির্বাহ করে থাকেন। বিশেষ করে শীতকালিন এ পাটালী গুড় দিয়ে জামাই-ঝি আত্মীয় স্বজনদের দুধের পিঠা খাওয়াতে এ পাটালি গুড়ের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। এ পাটালি গুড় বাজারে ২০০-৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়ে থাকে। এ বিষয়ে জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক আঃ জাঃ মুঃ আহসান শহীদ সরকার বলেন, খেজুরগাছের জন্য বাড়তি কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। স্থানীয় কৃষি বিভাগ এ রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরিতে পরামর্শ দিয়ে থাকে। এজন্য পরিত্যক্ত জমিতে খেজুর বাগান গড়ে তুলতে হবে। এতে কৃষকরা রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরিতে লাভবান হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।