কুমিল্লার তিতাসের রাস্তা ছাড়া নির্মাণ হচ্ছে খালের উপর পাঁচ কোটি ১২ লাখ টাকার সেতু। অপ্রয়োজনীয় এ সেতু নির্মাণে বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় হলেও সুফল পাবে না এলাকাবাসী। ছোট খালের উপর এত টাকার ব্যয়ে রাস্তা ছাড়া সেতু নির্মাণ নিয়ে রয়েছে এলাকাবাসীর ক্ষোভ। সাতশ মিটার দূরে একই খালের উপর প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে আরেকটি গার্ডার ব্রিজ। উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, বলরামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রী নারায়নকান্দি গ্রাম সংলগ্ন খালের উপর ৫ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ মিটার প্রস্থের গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বরের কাজের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। যার মেয়াদ ছিল এ বছরের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত। তবে তা আগামী বছরের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। সেতুর দুইপাশে ১১০ মিটার রাস্তা নির্মাণও বরাদ্দও একই প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে ম্যাক্স ইনফ্যাকচারাল লি. নামে প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে দেখা যায়, বলরামপুর ইউনিয়নে দক্ষিণ শ্রী নারায়নকান্দি গ্রামের প্রায় দেড় কিলোমিটার গ্রামীণ ভাঙ্গাচুরা কাঁচা রাস্তা রয়েছে। গ্রামের প্রবেশমুখে খালের উপর ঝুঁকিপূর্ণ অনেক পুরানো একটি সেতু রয়েছে। দেড় কিলোমিটার কাঁচা সড়কের পর দক্ষিণপাড়া বায়তুল জান্নাত কুয়েতী জামে মসজিদের সামনে গার্ডার সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণাধীন সেতুর পশ্চিমপাশে মসজিদের পর থেকে কোনো সংযোগ রাস্তা নেই। নির্মাণাধীন সেতুর পূর্বপাশে বিশাল এলাকা জুড়ে ফসলী জমি। অর্থ্যাৎ প্রায় দুই কিলোমিটার ফসলী জমির পর বলরামপুর গ্রামের বসতি। রাস্তাবিহীন উক্ত স্থানে সেতুর প্রায় ৪০ ভাগ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। তবে অবাক করা বিষয় হলো উক্ত সেতুর প্রায় ৭০০ মিটার দূরে একই খালে বলরামপুর গ্রামবাসীদের যাতায়াতের জন্য প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। বলরামপুর গ্রামের আলী আকবর বলেন, বলরামপুর নয়াবাজার থেকে সে সেতুটি হচ্ছে এটি দিয়েই আমরা উপজেলা সদরে যেতে পারবো। তবে দক্ষিণ শ্রী নারায়নকান্দি সংলগ্ন একই খালে কেন আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে সেটা বলতে পারবো না।
দক্ষিণ শ্রী নারায়নকান্দি গ্রামের গৃহিণী ফাতেমা আক্তার বলেন, খালের উপর সেতু হচ্ছে কিন্তু রাস্তা নেই। সেতু হলে কি লাভ হবে? একই গ্রামের মোকবল হোসেন বলেন, শুনেছি সেতু নির্মাণ হলে রাস্তা হবে। তবে ছোট খালে এত বড় ব্রিজ নির্মাণ করা উচিত হচ্ছে না। ছোট সেতু হলেও চলতো। উত্তর শ্রী নারায়নকান্দির রফিকুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণ শ্রী নারায়নকান্দি থেকে উত্তর শ্রী নারায়নকান্দি আসার জন্য একটি কাঁচা রাস্তা রয়েছে। খালের উপরে সেতু নির্মাণের চেয়ে আগে আমাদের রাস্তাটি পাকাকরণ জরুরি ছিল। অজথায় সরকারি টাকা অপচয় করে পাশাপাশি দুটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। ম্যাক্স ইনফ্যাকচারাল লিমিটেড এর প্রজেক্ট ইনচার্জ জিয়াউল হাসান শুভ্র জানান, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু করবো। রাস্তার নির্মাণের বিষয়টি আমাদের জানা নেই, তবে শুনেছি রাস্তা নির্মাণ হবে। একই খালে পাশাপাশি দুটি সেতু নির্মাণের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে। উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, বর্ষার কারণে বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন করে সময় বর্ধিত করা হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে পুনরায় কাজ শুরু হবে। রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রয়োজনেই পাশাপাশি দুটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।