দুই হাত ও পা বেঁধে ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতিত সাতক্ষীরা সদরের বাঁশতলা গ্রামের বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক ৭৩ বছর বয়সি অরবিন্দু মণ্ডল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়োর পথে গত রোববার তিনি মারা যান। অরবিন্দ মণ্ডলের মৃত্যুর খবর এলাকায় পৌঁছালে দুই সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে গেছে তার ছেলে বিশ্বজিৎ মণ্ডল ও তার স্ত্রী কবিতা মণ্ডল। তবে বাবার মৃত্যুর জন্য দাদা ও বৌদি ছাড়াও স্থানীয় ইউপি সদস্য সন্তোষ কুমার মণ্ডল, একই গ্রামের কলেজশিক্ষক গণেশ চন্দ্র গাইনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে অঞ্জনা মণ্ডল। প্রয়াত অরবিন্দ মণ্ডলের মেয়ে অঞ্জনা মণ্ডল জানান, তার বাবা বাঁশতলা রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২০১০ সালের ৯ জুন (অরবিন্দ) অবসরে যান। ক্রমশ তার শ্রবণ শক্তি হারিয়ে যায়। বড় দিদি বণলতা সরকার ভারত থেকে বাবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন।
অবসরে যাওয়ার পর থেকে দাদা বিশ্বনাথ ও বৌদি কবিতা বাবাকে ভালো চোখে দেখতো না। তাকে কারণে অকারণে নির্যাতন করতো। বিষয়টি তার বড়দিদি ভারতের নৈহাটীর বাসিন্দা বনলতা সরকার জানতে পেরে বাবুরাম কাকার ছেলে নকুলকে নির্যাতনের ছবি ভিডিও করে তাকে পাঠাতে বলে। গত বছর মা চপলা মণ্ডল মারা যাওয়ার পর থেকে নিজেই রান্না করে খেতেন বাবা। ছোট কাকা সুভাষ মণ্ডল, আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীরা তাকে খেতে দিতে চাইলেও ছেলে ও পুত্রবধূর গালাগালির কারণে বাবা নিজেই রান্না করে খেতেন। ২ নভেম্বর বাবাকে বাড়ির উঠানে ফেলে মশারির নেট দিয়ে হাতে ও পায়ে বেঁধে গালিগালাজের পাশাপাশি মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে। এর ভিডিও চিত্র ধারণ করে নকুল পাঠায় বণলতাকে। বিষয়টির সত্যতা পেয়ে বনলতা ওই নির্যাতনের ভিডিও ফেইসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ভিডিও ধারণ করার অপরাধে কলেজশিক্ষক গণেশ চন্দ্র গাইন কেড়ে নেয় নকুলের মোবাইল। এছাড়া কয়েকজনকে একঘরে করে দিয়ে দোকান থেকে মালামাল কেনা-বেচা বন্ধ করে দেয়া হয়। এ নিয়ে গত এক বছরে আটবার বাবাকে মারধর করে দাদা ও বৌদি। এরপরও বাবাকে পুলিশ গত ৫ নভেম্বর থানায় নিয়ে অভিযোগ দিতে বললে তিনি রাজী হননি। অথচ ৫ নভেম্বর তারা বাবাকে দেখে চলে যাওয়ার পরদিন বিকালে ইউপি সদস্য সন্তোষ মণ্ডল, কলেজশিক্ষক গণেশ চন্দ্র গাইন, তাপস সরকার, সুফল সরকারসহ একটি মহল সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে বৌদি কবিতা মণ্ডকে বাড়িতে তুলে দেন। ৬ নভেম্বর তিনি বাবার জীবনের নিরাপত্তার জন্য থানায় আবেদন করেন। শনিবার থানা থেকে তাকে ফোন দেয়া হয়।
মেয়ে অঞ্জনা মণ্ডল আরো জানান, তার বাবার গচ্ছিত দেড় লাখ টাকা দুই দফায় হারিয়ে যায়। পুত্রবধূ কবিতা ওই টাকা চুরি করেছে বলে বাবা ধারণা করে আসেন। ওই টাকা স্থানীয় ইউপি সদস্য সন্তাষ মণ্ডলের কাছে সুদে খাটাচ্ছে বৌদি কবিতা বলে তারা জেনেছেন। যে কারণে সন্তোষ মণ্ডল ও তার পরিবারের সদস্যরা বাবাকে নির্যাতনে কোন বাধা দেন না। উপরন্তু বাবা দ্রুত মারা গেলে তারা খুশী হন। আগে যে দড়ি দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করা হতো সেই দড়ি বাবা অন্যত্র লুকিয়ে রাখতেন। তাই ২ নভেম্বর শনিবার সকালে পূর্ণিমার বাড়ি থেকে মশারির নেট এনে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। বাবাকে নির্যাতনের ব্যাপারে প্রতিবেশী ও আত্মীয়রা কথা বলতে গেলে বউদি কবিতার আত্মীয় খগেন্দ্র নাথ মণ্ডল, তার স্ত্রী পূর্ণিমা তেড়ে আসেন।