টাঙ্গাইলের মধুপুরে চিপসের প্রলোভন দেখিয়ে এক আদিবাসী শিশু যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে একটি পক্ষ ব্যাপক তোড়জোড় শুরু করেছে। গত বুধবার টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ওই শিশুর মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়েছে। এর আগে মামলার পর মঙ্গলবার বিকালে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. রুমি খাতুন ওই শিশুর জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, মধুপুর উপজেলার শোলাকুড়ি ইউনিয়নের ভেদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কয়েকজন গত ৭ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) ভেদুরিয়া গ্রামের সেলেশটিন নকরেকের বাড়ির আঙিনায় খেলা করছিল। খেলার এক ফাঁকে সেলেশটিন নকরেকের ছেলে মিশর ডিউ (২৫) ছয় বছরের এক নারী শিশু শিক্ষার্থীকে চিপস দেয়ার কথা বলে তার ঘরে ডেকে নেয়। এরপর ওই নারী শিশু শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরে পরনের কাপড় খুলে তার উপর যৌন নিগ্রহ চালায়। ওই শিক্ষার্থী বাড়িতে গেলে পরনের হাফপ্যাণ্টে রক্ত দেখে তার মা জানতে চাইলে শিক্ষার্থী মায়ের কাছে সবকিছু খুলে বলে। পরে তার মা সেলেশটিন নকরেকের কাছে বিষয়টি জানান। ওই সময়ই মিশর ডিউ বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দেয়। ওই শিক্ষার্থীর বাবা-মা পরিবার ও বংশের লোকজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে। পরামর্শের এক পর্যায়ে এক মাতব্বর বিষয়টি পারিবারিকভাবে মীমাংসার উদ্যোগ নেয়। পরে মিশর ডিউ পরিবারের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টায় নামকাওয়াস্তে সামাজিক বৈঠক বসায়। বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় শিশুর পরিবার শুক্রবার(৮ নভেম্বর) মধুপুর থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করে। পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মধুপুর থানায় গত সোমবার অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করে। যৌন নিগ্রহের শিকার ওই নারী শিশুর শারীরিক পরীক্ষার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের পক্ষ থেকে তিন সদস্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। হাসপাতাল গঠিত মেডিকেল বোর্ডে আরএস (গাইনি) চিকিৎসক ডা. সাদিয়া সিদ্দিকাকে সভাপতি এবং মেডিকেল অফিসার ডা. মোছা. নাসরিন সুলতানাকে সদস্য এবং মেডিকেল অফিসার ডা. আবিদা সুলতানাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। ওই শিশুর মা ও বাবা জানান, সেলেশটিন নকরেক তাদের প্রতিবেশী ও সম্পর্কে চাচা। তার ছেলে মিশর ডিউ বখাটে প্রকৃতির ছেলে। চিপস দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের মেয়েকে ডেকে ঘরে নিয়ে মিশর ডিউ মুখ চেপে ধরে নির্মমভাবে পাষবিক নির্যাতন চালিয়েছে। তারা মিশর ডিউয়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান। শোলাকুড়ি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য আমরুশ সিমসাং জানান, খবর শুনে তিনি ওই নারী শিশুর বাড়িতে গিয়েছিলেন। তিনি এ বিষয়ে প্রথমে চিকিৎসা নিতে বলেছেন এবং পরে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। শোলাকুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রুস্তম আলী জানান, এ বিষয়ে কেউ তাকে জানায়নি। বিষয়টি নিয়ে পরিষদে সদস্যদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছিল- সেই আলোচনার মাধ্যমে তিনি জানতে পেরেছেন। স্থানীয় মাতব্বর দুলাল কুবি এ বিষয়ে জানান, বিষয়টি সমাধানের জন্য আদিবাসী প্রথা অনুযায়ী মাহরাং (শনিপুজা) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে ‘মাহরাং’ অনুষ্ঠান করে তারা অভিযুক্ত মিশর ডিউকে রেহাই দেন। পরে যৌন নিগ্রহের শিকার শিশুটির পরিবার থানায় মামলা করেছেন বলে তিনি শুনেছেন।