আর্সেনিক বিশেষজ্ঞদের মতে ও তাদের জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মতো আর্সেনিক প্রবল এলাকার তালিকা হিসেবে চাঁদপুর জেলাকে অন্যতম জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চাঁদপুরের জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, জেলায় পরীক্ষা করা গভীর নলকূপে আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া না গেলেও প্রায় ৯০ ভাগ অগভীর নলকূপে সনাক্ত হয়েছে মাত্রা অতিরিক্ত আর্সেনিক। চাঁদপুরে সর্বপ্রথম ১৯৯৬ সালে শাহরাস্তি উপজেলায় সনাক্ত হয় আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী। এর পর ১৯৯৯ সালে দেশের সর্বোচ্চ আর্সেনিক প্রবল অঞ্চল হিসেবে এই উপজেলাকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। আর্সেনিকযুক্ত পানি পানের কারণে নীরব এই ঘাতক রোগে আক্রান্ত হতে থাকেন জেলার হাজার-হাজার মানুষজন। শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. সারোয়ার হোসেন বলেন, জেলার সবচেয়ে বেশি আর্সেনিকপ্রবণ উপজেলা শাহরাস্তি।
আমরা প্রতিনিয়ত আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী পেলেও আশার কথা হচ্ছে তা আগের তুলনায় অনেক কম। আমরা মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্সেনিকমুক্ত পানি পানের জন্য আহ্বান জানাই। আগে আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর তথ্য উপাত্ত সংরক্ষণ করা হলেও বেশ কয়েক বছর তা সংরক্ষণ করা হচ্ছে না বলে জানান এ শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।
চাঁদপুর জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, মূলত উনবিংশ শতাব্দীর শেষ এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে এ চাঁদপুরে। এর ভয়াবহতা অনুধাবন করে আর্সেনিকমুক্ত পানি পানের লক্ষ্যে শুরু করা হয় নলকূপের পানি পরীক্ষা। ২০১১-১২ অর্থ বছর থেকে শুরু হয় সরকারিভাবে গভীর নলকূপ বসানোর কাজ। বিভিন্ন পৌরসভায় সরবরাহ করা হয় পরিশোধিত নদীর পানি। জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌলশ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু মুসা মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ২০২২ সালে একটি গবেষণা কার্য পরিচালনা করা হয়। এতে জেলার ২ লাখ ৫ হাজার ৭০টি নলকুপের পানি পরীক্ষা করে দেখা যায়, এসব নলকুপের ৬০ শতাংশ অগভীর এবং বাকি ৪০ শতাংশ গভীর নলকূপ। গবেষণায় গভীর নলকূপে আর্সেনিক পাওয়া না গেলেও অগভীর নলকূপের প্রায় ৯০ শতাংশে .০৫ এর বেশি আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক জলাধারের পানিতে আর্সেনিক কিংবা আয়রন থাকে না। আর চাঁদপুর যেহেতু নদীবেষ্টিত জেলা, তাই গ্রামীণ এলাকায় গভীর নলকূপের পাশাপাশি পরিশোধিত নদীর পানি সরবরাহ বৃদ্ধি করা গেলে আর্সেনিক থেকে এই অঞ্চলের মানুষ নিরাপদ থাকতে পারবে। তিনি বলেন, জেলায় ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।
যার মধ্যে প্রায় এক হাজার টিউবয়েল ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চাঁদপুরের সিভিল সার্জন নূর আলম দ্বীন বলেন, আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় হয়তো এই কাজে আমাদের ভাটা পড়েছে। আশাকরি এখন থেকে আক্রান্ত রোগীদের তথ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে আর্সেনিকের ওপরে ট্রেনিং দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যাতে করে আর্সেনিকের বিষয়ে আরো সচেতন থাকতে পারে এ জেলার সিকি কোটি মানুষ।