পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বেতমোর ইউনিয়নের পশ্চিম মিঠাখালী গ্রামের কৃষক ফিরোজ মাতুব্বর ইউটিউব দেখে পতিত জমিতে দার্জিলিং জাতের কমলার আবাদ করে সফল হয়েছেন। এ উপজেলায় তিনিই একমাত্র কমলা চাষি যিনি প্রথম কমলা আবাদ করে সফলতার মুখ দেখেছেন। তার বাগানের শতাধিক গাছে থোকায় থোকায় কমলা ধরেছে। কমলা আকারে যেমন বড়, তেমন স্বাদেও খুব মিষ্টি।
কমলা বাগানের প্রবেশমুখে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা হলুদ ও সবুজ রঙের কমলা। প্রতি থোকায় কমপক্ষে ১০টি করে কমলা ঝুলে আছে। পাঁচ বছর আগে উপজেলার বেতমোর ইউনিয়নের পশ্চিম মিঠাখালী গ্রামে অনাবাদি ৩৩ শতাংশ জমিতে দার্জিলিং জাতের ১২০টি কমলার চারা রোপণ করেন তিনি। এরইমধ্যে প্রতিটি গাছে ৩০ থেকে ৫০ কেজি করে কমলা ধরেছে। গত বছর ৩ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করলেও এ বছরে ৫-৭ লাখ টাকার কামলা বিক্রির আশা করেন তিনি।
এছাড়াও ২-৩ লাখ টাকার কমলার চারা বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন। ফিরোজ মাতুব্বর জানান, তার বাবা মতিলাল মাতুব্বর একজন প্রান্তিক চাষি। তিনি ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে কৃষিশ্রমে সহায়তা করতে শুরু করেন। ২০০৫ সালে পৈত্রিক জমি আর হালের বলদ বিক্রি করে সৌদি আরবে যান ফিরোজ। সেখানে একটি সিমেন্ট কারখানায় কয়েক বছর কাজ করেন। অবসর সময় ইউটিউব দেখে স্বপ্ন বুনেন দেশে ফিরে কমলার বাগান করবেন। সৌদি আরবে থাকার সময় কুষ্টিয়ার জীবনগরের একজনের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। তার কাছ থেকে কমলা চাষের বিষয়ে প্রথম জানতে পারেন ফিরোজ। পরে তিনি কুষ্টিয়ার জীবননগরের ওমর ফারুক খানের নার্সারি থেকে ১০ হাজার টাকার কমলার চারা সংগ্রহ করেন। তার স্ত্রী নাসিমা বেগম প্রথমে বাগানের কাজ শুরু করেন। এখন তিন বছর ধরে ভালো ফলন পাচ্ছেন। কমলা চাষে খরচ কম লাগে।
স্থানীয়রা জানান, যখন ফিরোজ মাতুব্বর কমলা চাষ শুরু করেন। তখন তার কাজটিকে অনেকেই পাগলামি বলেছেন। তার কাজটিকে তেমন গুরুত্ব না দিলেও গাছে কমলা দেখে সবাই অভিভূত। তিনি এখন এলাকার অনেকের অনুকরণীয় আদর্শ কমলা চাষি। তার সফলতা দেখে অনেক বেকার যুবক কমলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মনিরুজ্জামান জানান, আমদানি নির্ভরতা কমানোর জন্য অনেক চাষিকে আমরা কমলা চাষে উৎসাহিত করছি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় চাষিদের দার্জিলিং জাতের কমলার চারা রোপণের পরামর্শ দিচ্ছি। এখন মঠবাড়িয়া উপজেলা কমলা চাষে একটা উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় জায়গা।