দীর্ঘ দুই যুগ ধরে সংস্কার না হওয়ায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরা ভেটখালী সড়ক। সুন্দরবন দর্শনার্থী ও এই অঞ্চলের ৭ উপজেলার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এই সড়ক। প্রতিদিন ছোট-বড় হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে। কিন্তু সড়কের অধিকাংশ স্থানে পিচ ওঠে বড় বড় গর্ত হয়ে মরণ ফাঁদে পরিণতির ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে অসংখ্য দুর্ঘটনা।
জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলা শহর, খুলনা, যশোর হয়ে রাজধানীতে যাতায়াত করে শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, আশাশুনি, দেবহাটা উপজেলার লাখ লাখ মানুষ। ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা, পড়ালেখা ও জেলা শহরের যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই সড়ক ছাড়া বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। এছাড়া ভোমরা স্থলবন্দর ব্যবহারে এই সড়কের কিছু অংশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু দীর্ঘ ২ যুগ ধরে জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় অধিকাংশ স্থানে পিচ উঠে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।
গত ১৫ দিনে ব্যবধানে শ্যামনগরের খানপুর এলাকায় দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৩ জন এছাড়া আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সড়ক দিয়ে ৭ উপজেলার লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করছে। এদিকে সাতক্ষীরা রেঞ্জের সুন্দরবনের সৌন্দর্য দেখতে পর্যটকদের ব্যবহারের একমাত্র অবলম্বন এই সড়কটি। বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন সুন্দরবনে ভ্রমণের জন্য যেতে হয় এই সড়ক দিয়ে। অথচ গুরত্বপূর্ণ এই সড়কটি গত প্রায় দুই যুগ ধরে সংস্কার করা হয়নি। মাঝে মাঝে সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে নিম্নমানের পুডিং, ইট ও সিলকোডের কাজ করে দায় সারছে সড়ক বিভাগ।
স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে সড়কের অবস্থা এতটাই খারাপ যাতায়াত করলে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়েন। শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, দেবহাটা, আশাসুনী উপজেলা থেকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রোগীর নেওয়ার একমাত্র মাধ্যম এই সড়কটি এতই নাজুক ১০ কিলোমিটারের বেশি কোনো যানবহন চলতে পারে না। সেইসঙ্গে ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে পড়ছে পণ্য পরিবহন। যোগাযোগব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক হওয়ায় সাতক্ষীরা রেঞ্জের সুন্দরবনে আসতে উৎসাহ হারাচ্ছেন পর্যটকরা।
তারা আরো বলেন, ঢাকা থেকে সাতক্ষীরা শহরে আসতে সময় লাগে সাড়ে ৪-৫ ঘণ্টা। আর সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ আসতে সময় লাগে ৪ ঘণ্টা। সাতক্ষীরা সড়ক বিভাগের দাবি, বিগত সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সাতক্ষীরা- ভেটখালী সড়কের মান উন্নয়নে ৬টি প্যাকেজে ৮২২ কোটি ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করে। এরপর গত বছরের ৯ নভেম্বর একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। এরপর ২০২৬ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার নির্বাচনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়নি। যে কারণে কাজও শুরু করা যাচ্ছে না। শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, আশাশুনি, দেবহাটার গৃহবধূ শারমিন, নবিছা খাতুন, সাহানারা খাতুন বলেন, শারীরিক অসুস্থতার জন্য ডাক্তার দেখাতে প্রায়ই সাতক্ষীরা শহরে যেতে হয়। কিন্তু এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করলে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ি।
প্রফেসর শিক্ষাবিদ ওসমান গনি বলেন, সাতক্ষীরায় প্রচুর মাছ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে কালিগঞ্জ, দেবহাট ও শ্যামনগরে মাছের সঙ্গে কাঁকড়ার ঘেরও রয়েছে। সড়ক বেহাল হওয়ায় ট্রাকচালকরা আসতে রাজি হয় না। আর আসলেও বাড়তি ভাড়া গুণতে হয়। সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার পারভেজ বলেন, সাতক্ষীরা থেকে কালিগঞ্জ পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার চারলেন ও কালিগঞ্জ থেকে ভেটখালী পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার ২৪ ফুট প্রস্থ রেখে ২০২৩ সালে একটি প্রকল্পের খসড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ৮২২ কোটি টাকা ব্যয় দেখিয়ে প্রকল্পের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। গত দুই মাস মন্ত্রণালয়ে এই কাজের দরপত্রগুলো অনুমোদনের জন্য রয়েছে। যদি অনুমোদন না হয় আর ঠিকাদার না আসে, তবে আমাদের পক্ষে এই সড়ক আর মেরামত করা সম্ভব হবে না।