হাতীবান্ধায় দাদন ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া, অতিষ্ঠ এলাকাবাসী
প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় দাদন ব্যবসায়ীদের চড়া সুদে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। সুদসহ টাকা পরিশোধ করেও স্বাক্ষরিত ফাঁকা স্ট্রাম্প ও ফাঁকা ব্যাংকচেক ফিরে না পাওয়ায় দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় পৃথক পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ ও গণপিটিশন দিয়েছেন এলাকাবাসী। অভিযোগকারী উপজেলা দক্ষিণ গড্ডিমারী গ্রামের অনিল চন্দ্র বলেন, ২০ শতাংশ সুদে দুই দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ছেলে অসুস্থ থাকার কারণে নির্ধারিত সময়ে ওই টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। তাই দাদন ব্যবসায়ীরা তাকে প্রায়ই অপদস্থ করতেন। পরে বাধ্য হয়ে বসতভিটার আট শতক জমি দাদন ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেছেন। এখন পর্যন্ত তার দেয়া চেক ও স্ট্যাম্প ফিরত দেয়নি ওই দাদন ব্যবসায়ী। অপর অভিযোগকারী পূর্ব সিন্দুর্না এলাকার মোহন চন্দ্র রায় বলেন, দাদন ব্যবসায়ীর দাবি করা টাকা পরিশোধ করেও ফিরে পাচ্ছেন না স্বাক্ষরিত ফাঁকা স্ট্যাম্প ও ফাঁকা ব্যাংকচেক। জানা গেছে, হাতীবান্ধা উপজেলার গ্রামগঞ্জ, শহরবন্দর সব জায়গায় এখন ছড়িয়ে পরেছে দাদন ব্যবসায়ীদের চড়া সুদের ব্যবসা। গ্রহীতাদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ফাঁকা স্ট্রাম্পে ও ফাঁকা ব্যাংকচেকে স্বাক্ষর। তারপর দেয়া হয় চড়া সুদে টাকা। গ্রহীতা চড়া সুদের টাকা দিয়ে দেরি হলে দাদন ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামত ব্যাংক চেকে টাকার পরিমাণ বসে দিচ্ছে চেক জালিয়াতির মামলা।
অভিযোগ রয়েছে, অনেকেই দাদন ব্যবসায়ীর দাবি করা টাকা পরিশোধ করেও ফিরে পাচ্ছেন না স্বাক্ষরিত ফাঁকা স্ট্যাম্প ও ফাঁকা ব্যাংকচেক। দাদন ব্যবসাকে কেন্দ্র করে হাতীবান্ধা উপজেলার গুটি কয়েক ব্যক্তি হয়েছে অঢেল সম্পত্তির মালিক। কৃষক-ব্যবসায়ি ছাড়াও বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকদের চেক বন্ধক নিয়ে দাদন দেয়া এসব ব্যক্তির কাজ। এ ছাড়া কিছু মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের লোকজন শিক্ষক ও ব্যবসায়িদের চেক ও স্ট্যাম্প বন্ধক নিয়ে উচ্চ সুদে দিচ্ছে ঋণ। দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।
সুদে-আসলে জমা টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেকেই মামলার কারণে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন অন্যত্রে। সম্প্রতি ভুক্তভোগী এবং স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে বিভিন্ন দপ্তরে ২০ থেকে ২১ জন দাদন ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দিয়েছেন।
শিক্ষকরা জানান, এসব চেক দিয়ে টাকা ব্যাংক থেকে তুলতে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সে জন্য স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেয়া হচ্ছে। শিক্ষক ও চাকরিজীবীকে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ সুদে চেক বই বন্ধক রেখে টাকা দেন। আর কৃষক, ব্যবসায়ীসহ অন্য পেশার মানুষকে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ সুদে টাকা দেওয়া হচ্ছে।