লাভের আশায় আগাম আলু চাষ

পচনে দিশাহারা কৃষক

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে আগাম সেভেন জাতের আলু রোপণ করে মড়ক রোগে পচন ধরেছে। এ অঞ্চলের জমিগুলো একদম উঁচু বেলে-দোআঁশ মাটি হওয়ায় প্রতিবছর আগাম আলু চাষ হয়ে থাকে। এবার গত বছরের চেয়ে বীজের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় আলু রোপণ ব্যয় বেশি হয়েছে বলা জানা যায়। তবে লাভের আশায় বেশি খরচে আগাম আলু রোপণ করে মড়ক রোগে পচন ধরায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অক্টোবরের শুরুতে এ অঞ্চলের কৃষকরা আগাম আলু রোপণ করেছেন। তবে হিমাগার অব্যবস্থাপনার কারনে বীজ আলু রোপণের পরে অধিকাংশ কৃষকের আলুতে দ্রুত মড়ক রোগে পচন ধরেছে। অনেকে কৃষি অধিদফতরের পরামর্শে জমিতে কীটনাশক স্পে ও পরিচর্যা করছেন। আবার অনেক কৃষকের জমির আলু পচন ধরে গাছ মারা গেছে। নিতাই ইউনিয়নের খোলাহাটি এলাকার আলু চাষি সুরুজ মিয়ার ৩ বিগা জমি, একরামুল আলীর ১ বিঘা, নিতাই ইউনিয়নের কাচারিপাড়া এলাকার হাফিজুল ইসলামের ২ বিঘা জমি ও নিতাই বৌধপাড়া এলাকা হাসান আলীর ২ বিঘা জমির আলুতে পচন ধরেছে। কৃষকরা জানান, এ উপজেলায় মুক্তা হিমাগার নামে একটি আলু সংরক্ষণাগার থাকায় সেখানে আলুর বীজ সংরক্ষণ করে কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে বীজে কিছুটা পচন ধরে। পরে বীজের দাম বেশি হওয়ায় কৃষক নিরুপায় হয়ে সংরক্ষণ করা বীজ নিয়ে এসে জমিতে রোপণ করেন। বীজ আলু রোপণের কিছুদিন পরে আলুতে দ্রুত মড়ক রোগ ধরে পচন ধরে গাছ মারা যাওয়া শুরু হয়। পরে কৃষি অধিদফতরের পরামর্শ নিয়ে স্প্রে ও কীটনাশক ব্যবহার করেও তা কাজে আসছে না। নিতাই ইউনিয়নের খোলাহাটি এলাকার কৃষক সুরুজ মিয়া বলেন, আমি মুক্তা হিমাগারে ৩ বিগা জমিতে রোপণ করার জন্য আলু সংরক্ষণ করে রেখেছিলাম।

তারপর যখন সেখান থেকে আলুর বীজ বের করি তখনেই আলুর বীজে হালকা পচন ধরেছিল। তারপর হিমাগার কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা কিছুই বলেনি। আমি সেগুলো নিয়ে এসে জমিতে রোপণ করলে ১৫-২০ দিন পরে দ্রুত মড়ক রোগে আলুর গাছগুলো মারা যাওয়া শুরু হয় তারপরে মাটি খুঁড়ে দেখি আলুর বীজ ভেতরে সব পচে গেছে। লাভের আশায় প্রায় কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করে আগাম আলু রোপণ করেছি। আলুতে পচন ধরায় আমার সব টাকা লস হয়ে গেল। কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে স্প্রে করলেও তা কাজে আসছে না। এখন এমন মুহূর্তে আর্থিক সমস্যার কারণে নতুন করে আলুও রোপণ করতে পারছি না।

এবিষয়ে আলু সংরক্ষণাগার মুক্তা হিমাগারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম শরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, সেখানের কৃষকেরা আগাম সেভেন জাতের আলু রোপণ করেন।আমাদের হিমাগারে তাদের বেশি আলুর বীজ থাকে। আমাদের হিমাগারে কোনো অব্যবস্থাপনা নেই। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, এ উপজেলায় বছরের পর বছর একই জমিতে কৃষকেরা একই বীজ চাষ করার কারণে আলুতে মড়ক রোগ দেখা দিয়ে পচন দেখা দিচ্ছে। আমরা মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করছি পরামর্শ দিচ্ছি তাতে কাজ হচ্ছে, তবে মাত্রাটা একটু কম।এটা মূলত বীজবাহিত রোগ এটা থেকে বাঁচার জন্য বীজটাকে ভালো করে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। আলুর বীজ হিমাগারে রাখাতে অব্যবস্থাপনা থাকলে দ্রুত মড়ক রোগে ১৫-২০ দিনের মধ্যে আলুর পচন দেখা দিবে। এবছর ৬ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আগাম আলু ৪ হাজার ৭০০ হেক্টর।তবে কিছু কৃষকের আলুতে পচন ধরায় লক্ষ্যমাত্রা একটু কম হবে।