নার্সারিতে ফিরেছে আর্থিক সচ্ছলতা

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আসাদুজ্জামান নূর, মনোহরদী (নরসিংদী)

নার্সারিতে সফল মাহবুবুল আলমের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার হাররদিয়া গ্রামে। ২০০১ সালে অভাবের সংসারে হাল ধরতে শুরু করেন নার্সারি। কঠোর প্ররিশ্রম আর মেধা দিয়ে গড়ে তোলেন ‘ফুলকলি’ নামের একটি নার্সারি। ধীরে ধীরে ফুলকলির পরিধি বাড়তে থাকে। আর এর মাধ্যমেই ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন মাহবুব। বাবার অল্প আয়ের সংসারে অনেক সংগ্রাম করে এগোতে হয়েছে তাকে। মাহবুব জানান, মা-বাবা, তিন ভাই ও দুই বোন নিয়ে সাতজনের বড় সংসার তাদের। বাবা আব্দুল বাতেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। বাবা অল্প বেতনে সাতজনের সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতেন। বড় সন্তান হিসেবে সংসারের অভাব-অনটন তাকে চরমভাবে পীড়া দেয়।

তখন ২০০১ সাল, সংসারে চরম অভাব। এসএসসি পরীক্ষাও সামনে। পরীক্ষা আর অভাবের দুয়ারে দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ সময় মাথায় নার্সারির চিন্তা আসে। সে পথ ধরেই পাশের শিবপুর উপজেলা থেকে মাত্র ২৯ টাকায় একটি ফুল গাছ কেনেন তিনি। দীর্ঘদিন পরিচর্যার পর ওই গাছের কিছু ফুল বিক্রি করেন আর কিছু বীজ হিসেবে রেখে দিন। ফুল এবং বীজ বিক্রির টাকা দিয়ে বাড়ির আঙিনায় ছোট পরিসরে নার্সারির কাজ শুরু করেন মাহবুব। ধীরে ধীরে তিনি এগিয়ে যান; খুলে যায় তার ভাগ্যদ্বার। বর্তমানে আড়াই বিঘা জমির নার্সারিতে লেংড়া, আশ্বিনী, আম্রপলি, ফজলি, বারোমাসি, হিমসাগরসহ, বিভিন্ন প্রজাতির আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু,কমলা, নারিকেল, আমড়া, কামরাঙা, পেয়ারা, পেঁপে, ডালিম, জলপাই, আপেল, কুলসহ বিভিন্ন জাতের ফুল ও ফল গাছের চারা রয়েছে।

রয়েছে ঔষধি গাছের চারাসহ সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য নানা প্রজাতির গাছের চারাও। নিয়মিত-অনিয়তভাবে বেশ ক’জন শ্রমিক তার নার্সারিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। সব খরচ বাদ দিয়ে বর্তমানে মাহবুবের প্রতি মাসে আয় হচ্ছে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। মাহবুব জানান, তার নার্সারির চারা মনোহরদীর চাহিদা পূরণ করে রাজধানী ঢাকায়ও সরবরাহ করা হচ্ছে। সফল নার্সারি ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি মনোহরদী উপজেলা বৃক্ষমেলায় এ পর্যন্ত ১৬ বার প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। তার নার্সারিতে ৬ মাস শ্রমিক হিসেবে কাজ করে ্ও পেশায় উৎসাহিত হয়ে আবু ছাইদ নামের এক তরুণ নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন নার্সারি।

এছাড়া মাহবুবের সফলতার উৎসাহিত হয়ে নরোত্তমপুরের সাবিনা ইয়াসমিন, কামাল হোসেন, তানভীর-সাদিয়ার, মারজান-মহিমার চাঁন পক্ষী নার্সারী, মোজাম্মেল, আব্দুল কাইয়ুম, সুটরিয়ার কিরন, কাদির, লোকমানসহ মনোহরদীতে গড়ে উঠেছে কৃষি অফিসের হিসাবে ২০টি নার্সারি। মনোহরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুনা আক্তার বলেন, মাহবুব মনোহরদী উপজেলার একজন সফল নার্সারি ব্যবসায়ী। তার মতো আরও যদি কেউ এ ধরনের উদ্যোগ নেন, তবে কৃষি বিভাগ তাকে পূর্ণ সাহায্য-সহযোগিতা করবে।