যশোরের কেশবপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় একটি পা হারিয়েছেন ট্রাক চালকের হেলপার হাবিবুর রহমান (৪৩)। হাসপাতালে তিন মাস চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফিরে ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালানো শুরু করেন। এখন তিনি ভ্যান চালিয়েই অনেক কষ্টে সংসার চালাচ্ছেন। তার এক কথা, যত কষ্টই হোক, কখনো কারো কাছে হাত পাতবেন না। কেশবপুর উপজেলার মূলগ্রাম সানাপাড়ায় হাবিবুর রহমানের বাড়ি। ২০০৯ সালের শেষ দিকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পথে কুমিল্লায় একটি ট্রাক অন্য একটি ট্রাকের পেছনে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ট্রাক চালকের হেলপার হাবিবুর রহমানের একটি পা থেঁতলে গুরুতর আহত হন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার বাঁম পা কেটে ফেলতে হয়। বাড়িতে ফিরে এলে পায়ের কাটা অংশে সংক্রমণ (ইনফেকশন) দেখা দেয়। পরে খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয়। সেখানে তিন মাস চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফেরেন। পরে হাবিবুর রহমান সিদ্ধান্ত নেন তিনি কাজ করে খাবেন। কিন্তু কারো কাছে হাত পাতবেন না। প্রথমে শুরু করেন সবজির ব্যবসা।
কিন্তু ব্যবসায় সুবিধাজনক লাভ না হওয়ায় সংসার চালাতে পারছিলেন না। পরে ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে ঋণের টাকায় ব্যাটারি চালিত একটি ভ্যান কিনে চালাতে শুরু করেন। প্রতিদিন ঋণের কিস্তি দিতে হয় ৩৫০ টাকা। ভ্যান চালিয়ে যা আয় করেন, তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চালাতে থাকেন। বাকি টাকায় তিনি কিস্তি শোধ করেন। তার বাড়িতে একটি ঘর ছাড়া আর কোনো জায়গা নেই। এতো কষ্টের মধ্যে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি। হাবিবুর বলেন, এক পা নিয়ে ভ্যান চালাতে অনেক কষ্ট হয়। বিশেষ করে এ ভ্যান উঁচু জায়গায় ওঠানামা করাতে বেশি কষ্ট হয়। অনেকে ভ্যানে উঠে প্রতিবন্ধী দেখে আবার ভ্যান থেকে নেমে যান। তখন তিনি মনে কষ্ট পান। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। কেউ কেউ অন্য ভ্যান রেখে তার ভ্যানে উঠতে বেশি আগ্রহ দেখান। মূলগ্রামের ব্যবসায়ী মহিতোষ দত্ত তার ভ্যান ছাড়া অন্য কারো ভ্যানে ওঠেন না। এ রকম অনেকের ভালোবাসাও পান হাবিবুর রহমান। উপজেলার মূলগ্রামের বাসিন্দা ও বেগমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন মণ্ডল বলেন, হাবিবুর রহমান অনেক মানুষের জন্য অনুকরণীয়। একটি পা না থাকলেও তিনি ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। তবুও তিনি কারো করুণার পাত্র হতে চান না। বিষয়টি অবশ্যই তার দৃঢ়তার অনন্য উদাহরণ। স্ত্রী, এক ছেলেসহ বর্তমান হাবিবুর রহমানের তিন জনের সংসার। প্রতিদিন ভ্যান চালিয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করেন। গোলাম রসুল নামে তার ছেলে মূলগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক দ্বীন ইসলাম বলেন, হাবিবুর রহমান একজন অদম্য মানুষ। এক পা হারিয়ে তিনি দমে যাননি। পরিশ্রম করে ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। বিষয়টি বিবেচনা করে তার ছেলের বিদ্যালয়ের পড়াশোনার জন্য কোনো বেতন নেয়া হয় না। হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি যত দিন নিজে রোজগার করে যেতে পারবেন, কারো কাছে হাত পাতবেন না। আল্লাহ যেন তাকে কখনো কারো কাছে হাত পাততে না দেন। এটাই তিনি প্রত্যাশা করেন।