নীলফামারী জেলার কোল্ডস্টোর গুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলু মজুত থাকার পরও বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে অসাধু সিন্ডিকেট। ফলে হিমাগার থেকে বের করার পর হাত বদলালেই বেড়ে যাচ্ছে আলুর দাম। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে উৎপাদক পর্যায়ে ৪০ থেকে ৪২ টাকার আলু হাত বদলে ভোক্তার ব্যাগে উঠছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে। ফলে ‘লাভের মধু’ খাচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। অন্যদিকে আলুর দাম বৃদ্ধির জন্য খুচরা বিক্রেতারা দায়ী করছেন পাইকারদের। আর পাইকাররা দুষছেন হিমাগার সিন্ডিকেটকে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, হাত বদলালেই বাড়ছে দাম। এ অবস্থায় আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার মনিটরিং জোরদার না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ভোক্তারা। কৃষি বিপণনের তথ্য মতে, হিমাগারে আলু সংরক্ষণের পর পরই দাম বাড়ানোর খেলা শুরু হয়। বর্তমানে জেলার ১১টি হিমাগারে আলু মজুত আছে প্রায় ২০হাজার টন। এর মধ্যে ১৫ হাজার টন বীজ আলু দেখিয়ে সিন্ডিকেট বেড় করে নিয়েছেন বলে হিমাগার সূত্র জানিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে অসাধু সিন্ডিকেট বাজার অস্থির রাখার জন্য উৎপাদনের শীর্ষ জেলা নীলফামারীর হিমাগারগুলো থেকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বের করছে আলু। সূত্র মতে, কৃষকের কাছ থেকে ৩৮ টাকা দরে কেনা ও হিমাগারে সংরক্ষণে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীদের খরচ পড়ে কেজি প্রতি ৪০ টাকা। তারা কেজি প্রতি ১২ থেকে ১৪ টাকা বেশি মুনাফা নিয়ে হিমাগারের গেটেই বিক্রি করছেন ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা দরে।
এরপর ৫ থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধি করে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কেজি প্রতি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে আলু বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। আর খুচরা বিক্রেতারা ৭ টাকা মূল্য বাড়িয়ে বাজারে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে। সরেজমিনে নীলফামারীর শাকামাছা হাটের কিচেন মার্কেটের ক্রেতা আব্দুল হামিদ জানান, তিনি গত সপ্তাহে প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল খুচরা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। এই সপ্তাহে আলুর দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। তিনি বেশ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আলু সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে যাচ্ছে। এই দাম বৃদ্ধিতে অবশ্যই কালোবাজারির হাত রয়েছে। গতকাল ২৩ নভেম্বর শাকামাছা হাটে পাইকারি আলু বিক্রি হয়েছে, কাটিনাল ৫৮ ও কারেজ ৬২ টাকা বললেন ব্যবসায়ী ইলিয়াস হোসেন। দেখা গেছে, পৌর শহরের সাহেব বাজার, নতুন বাজার, দারোয়ানি টেক্সটাইল বাজার, কাজিরহাট, সৈয়দপুর পৌর সবজি বাজার, পোড়ারহাট, হাজারিরহাট, সেখানেও খুচরা আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। সৈয়দপুর সবজি বাজারের কহিনুর বলেন, শুধু সৈয়দপুর নয়, রংপুর দিনাজপুরের বিভিন্ন হিমাগার থেকে এসব আলু আমরা সংগ্রহ করে বাজারে খুচরা ব্যাবসায়ীদের দেই। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে হিমাগারগুলোতে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম আরো বেশি বেড়েছে।
নীলফামারী চাঁদের হাটের অঙ্কুর সীড হিমাগারের ম্যানেজার শফি হায়দারের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে হিমাগারের সত্ত্বাধিকারী হাসানুজ্জামান বাচ্চু বলেন, আমি সবসময় এখানে থাকি না, এখানে কৃষক ও এজেন্টের মাধ্যমে বীজ আলু রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ব্যবসায়ীদের আলু আছে। বর্তমানে ২ লাখ ৫ হাজার বস্তা আলু রয়েছে। তবে আগাম চাষের জন্য বেশিরভাগ আলু বের হয়ে গেছে। আর সিন্ডিকেটের বিষয় টি দেখবো। শহরঘেঁষা টুপামারী ইউনিয়নের উত্তরা বীজ হিমাগারের ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ রয়েছে, কিন্তু তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের হিমাগারে ১ লাখ ৫ হাজার বস্তার মধ্যে ১ লাখ বস্তা নিয়ে গেছে। এই হিমাগারেনীলফামারী ছাড়াও লালমনিহাট, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলার কৃষকের আলু রাখা আছে। এখানে ৯৫ শতাংশ বীজ মজুদ থাকে। উত্তরা হিমাগারের বর্তমান মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন মিলন সিন্ডিকেটের বিষয়টি খতিয়ে দেখবে বলে জানান। কৃষি অফিস জানান, গত বছর ২২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টন। যার ৩৯ হাজার হাজার মেট্রিকটন বীজের জন্য, ৭৫ হাজার খাওয়ার জন্য আর অবশিষ্ট বাহিরের জেলার চাহিদা মেটানোর জন্য নির্ধারণ করা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি কর্মকতা জানান, পর্যাপ্ত আলু মজুত থাকার পরেও আলুর বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার একমাত্র কারণ হিমাগারের এজেন্টরা, আর এদের নিয়ন্ত্রণ করে হিমাগারের ম্যানেজার ও কর্মচারীরা। তারা কৃষকের নাম করে ভুয়া মানুষের নামে কার্ড বানিয়ে আলু রাখেন। বিভিন্ন হিমাগারে গিয়ে দেখে অনুসন্ধান করলে বেরিয়ে আসবে থলের বেড়ালো।