চলতি রবি মৌসুমে গাইবান্ধার ৭ উপজেলায় ১২ হাজার ৩৬ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এতে কৃষকের বীজ চাহিদা রয়েছে ১৯ হাজার ৬৬০ মেট্রিকটন। এর মধ্যে স্থানীয় কোল্ড স্টোরে ১০ হাজার ২৫৮ মেট্রিকটন আলু বীজ মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ। যার চাহিদার তুলনায় প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মেট্রিকটন বীজ ঘাটতি থাকায় অন্যত্র থেকে বেশি দামে বীজ সংগ্রহের চেষ্টা করছেন কৃষকরা। এতে করে আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার আশঙ্কা তাদের। গতকাল গাইবান্ধার পলাশবাড়ী, সাদুল্লাপুর ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে দেখা গেছে কৃষকদের আলু চাষাবাদের দৃশ্য। এরই মধ্যে বেশ কিছু কৃষক জমিতে বীজ রোপণ করেছেন।
আবার কেউ কেউ জমি প্রস্তুত করছেন। সবমিলে কৃষিমাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রান্তিক কৃষকরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাইবান্ধা জেলায় অন্যান্য নিত্যপণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলছে আলুর দামও। বর্তমানে প্রতিকেজি খাবার আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা দরে। তাই এ বছরে অধিক লাভের স্বপ্নে কৃষকরা ঝুঁকছেন এই চাষাবাদে। তবে বীজের সংকটের কারণে কৃষক জেলার বাহির থেকে অতিরিক্ত দামে কিনছেন আলু বীজ। এর ফলে চাষাবাদে চরম হিমসিমে পড়ছেন তারা।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, চলতি রবি মৌসুমে জেলার সাত উপজেলায় ১২ হাজার ৩৬ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরই মধ্যে প্রায় ৬৫০ হেক্টর অর্জিত হয়েছে। আর গত বছরে আলু আবাদ হয়েছিল ১০ হাজার ২৮০ হেক্টর। তবে চলতি মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে এতে প্রায় ২ লাখ ৫৪ হাজার টন আলু উৎপাদন হতে পারে। এ থেকে জেলায় বার্ষিক চাহিদা রয়েছে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার টন। সরেজমিনে জানা যায়, গেল খরিপ মৌসুম থেকে আলুসহ শাক-সবজির দামবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তাই চলতি রবি মৌসুমে আলু চাষাবাদে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে অনেকটাই। তবে এ বছরে স্থানীয়ভাবে বীজের সংকট থাকায় মুন্সীগঞ্জ জেলা থেকে বেশি দামে বীজ সংগ্রহ করছে প্রান্তিক কৃষক। সেই সঙ্গে সার-কিটনাশক ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের দাম বেশি থাকায় আলু চাষে হিমসিম খাচ্ছেন বলে তাদের অভিযোগ। তবুও লাভের আশায় মাঠে ঘাম ঝড়াচ্ছেন তারা। বিশেষ করে জেলার গোবিন্দগঞ্জ ও সাদুল্লাপুর এলাকায় ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে। ধাপেরহাট এলাকার কৃষক নজিম উদ্দিন বলেন, এ বছর দুই একর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু বীজ সংকট থাকায় তা পূরণ করা সম্ভব না। এরই মধ্যে দুই বিঘা জমি প্রস্তুত করেছি। এতে প্রায় ৫৫০ কেজি বীজের দরকার। এর মধ্যে ৩০০ কেজি বীজ মুন্সীগঞ্জ জেলা থেকে অধিক দামে বীজ সংগ্রহ করছি। খোদবকস গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত বছর আলু চাষ করে লাভবান হয়েছি। এ বছরের খাবার আলুর দাম ভালো থাকায় দেড় বিঘা জমিতে বীজ রোপণ করেছি। প্রতি কেজি বীজ কিনতে হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। এতে প্রতিবিঘা খরচ হবে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে বিঘায় প্রায় ৮০ মণ আলু উৎপাদন সম্ভব। গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, চলতি রবি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন কোল্ড স্টোরে আলু বীজ মজুদ রয়েছে। সেখান থেকে সংগ্রহ করে চাষাবাদ শুরু করছেন কৃষকরা। তাদের লাভবান করতে মাঠপর্যায়ে কাজ করা হচ্ছে।