যশোরের কেশবপুরে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ধান কাটায় অংশ নিচ্ছেন। এ বছর উঁচু জমিতে আমন ধানের ভালো ফলন ও বাজারে এবার ধানের দামও ভালো পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়নে দায়িত্বে থাকা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন জানান, এ বছর কেশবপুর উপজেলায় ৯ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন কৃষকেরা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয় ৯ হাজার ৫০০ হেক্টর। এর মধ্যে ব্রি -৪৯ ধান, ব্রি- ৭৫ ধান, ব্রি ৮৭ -ধান, ব্রি- ৫১ ধান, বেনা ধান -৭, বেনা ধান -১৭, বেনা ধান- ২০, ক্ষীর কোন ধান, স্বর্ণা ধান চাষ করেছেন কৃষকরা। সম্প্রতি আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এরই মধ্যে অনেক কৃষকরা তাদের মাঠের পাকা আমন ধান কেটে ঘরে তুলেছেন।
উপজেলার একাধিক কৃষক জানান, ভালো রৌদ্র হওয়ার ফলে আমরা ধান কাটতে পারছি। কেশবপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় অধিকাংশ গ্রামে কৃষকরা আমন ধানের আবাদ করেছে। তবে কিছু কিছু এলাকায় কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা গেছে। প্রতি বিঘাতে ১৬ থেকে ১৭ মণ ধান হবে বলে কৃষকরা ধারণা করেছে। উপজেলার মজিদপুর, হাসানপুর, বগা, বুড়িহাটি, দোরমুটিয়া, ত্রিমোহিনী, সাতবাড়িয়া, সাগরদাঁড়ি, চিংড়া, কাবিলপুর, হাসানপুর, শ্রীফলা, পাঁজিয়া, কলাগাছী, নারায়নপুর, গৌরিঘোনাসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ধান কাটা কাজে ব্যাস্ত সময় পার করেছেন। উপজেলার মজিদপুর গ্রামের আজিম উদ্দিন, সাতবাড়িয়া গ্রামের সুরুত আলী, ইসলাম সরদার, আলম সরদার, রামচন্দ্রপুর গ্রামের আলাউদ্দীন দফাদার, ওজিয়ার সরদার, হায়দার আলীসহ অনেক কৃষকরা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছরে বৃষ্টির পানি বেশি হলেও উঁচু জমিতে ফলন ভালো হয়েছে। বিঘা প্রতি জমিতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ১৩ থেকে ১৪ মণ ধান পাবে বলে তারা ধারণা করেছেন।
এ ছাড়া পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও শ্রম হিসাবে কাজ করে থাকে। হাসানপুর গ্রামের আতিয়ার রহমান বলেন, জমিতে আমন আবাদের চাষ করেছেন। ডাঙা জমিতে ধানের ফলন দেখে আমি আনন্দে আত্মহারা হয়েছি। অনেক কৃষকরা জানান, এ বছর বৃষ্টির পানি বেশি হলেও প্রতি বিঘাতে ১৩ থেকে ১৪ মণ ধান আশা করছি। বাজারে এবার ধানের দামও ভালো। আমাদের প্রতি বিঘা জমিতে ধান রোপন শুরু থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হলেও আনন্দ পাচ্ছি। জমিতে সার, কীটনাশক দিয়ে খরচ বেশি হলেও ধানের ফলন ভালো হয়েছে। সাতবাড়িয়া গ্রামের ফতেমা বেগম, জোহরা বেগম, আকলিমা বেগম, জাহানারা বেগম, চায়না বেগম জানান, আমাদের কাজের সরদার সুরুত আলী। তার মাধ্যমে বছরে কর্মসূচির কাজ থেকে শুরু করে মাঠের সব কাজে পুরুষের পাশাপাশি আমরাও কাজে নিয়োজিত হই। তারা বলেন, প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ৫০০ টাকা করে শ্রমের মজুরি পায়ে থাকি এবং দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত দেড়শত টাকা শ্রমের মজুরি আসে। শ্রম দিয়ে অর্থ উপার্জন করে স্বামী সন্তানদের নিয়ে ভালই সুখে আছি। আমরা বাড়ি বসে না থেকে কাজ করে খেটে খেয়েও মনের মাঝে একটু সুখ আনন্দ খুঁজে পায়। উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদা আক্তার বলেন, এবার কেশবপুর উপজেলায় ৯ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করেছেন কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলেও উঁচু জমিতে আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে এবার ধানের দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকেরা। এরই মধ্যে কোনো কোনো এলাকায় কৃষকরা তাদের মাঠের পাকা ধান কেটে ঘরে তোলা শুরু করেছেন।