ঢাকা ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত ভোলার চরাঞ্চল

অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত ভোলার চরাঞ্চল

ভোলার উপকূলীয় বিভিন্ন চরাঞ্চলে অতিথি পাখিদের মেলা বসেছে। ভোর হলেই ডুবোচরগুলোতে পাখিদের ডুব ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে খাবার সংগ্রহে ডুব ও সাঁতার কাটে। প্রতিদিন অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে নিঝুম এসব দ্বীপের বিস্তৃত প্রান্তর। সুদূর সাইবেরিয়া, তিব্বত, মোঙ্গলীয়াসহ বিভিন্ন বরফে ঢাকা এলাকা থেকে প্রতিবছর এ সময়টাতে ভোলায় আসেন অতিথি পাখিরা। এ সব পাখির কিচির-মিচির ডাক ও খনুসুটি প্রকৃতি প্রেমীদের মুগ্ধ করে তোলে। শীতের অতিথি পাখিদের এমন আগমনে প্রকৃতির রুপে ভিন্ন শোভা যোগ করে।

শীতের শুরুর নভেম্বরের প্রথম থেকে এসব অতিথি পাখিরা আসতে শুরু করে। আবার শীতের শেষ মার্চের প্রায় শেষ পর্যন্ত থাকতে দেখা যায়। চরগুলোর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় অতিথি পাখিদের বিচরণ। সাগর-নদী, চর আর সবুজ গহীন বনের সমাহারে কান পাতলেই শোনা যায় পাখিদের কিচির-মিচির আওয়াজ। শীতের সকালে কুয়াশা ভেদ করে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ডানা ঝাপটে পাখিদের উড়ে বেড়ানো যে কারো মন ভোলায়। ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ো উড়ি করে চরগুলোতে চলে পাখিদের খাবার সংগ্রহের প্রতিযোগিতা। বঙ্গোপসাগরের কূলঘেঁষা ঢালচর, মনপুরা, কলাতলীর চর, চর কুকরী মুকরী, চর শাহজালাল, চর শাজাহান, চর পিয়াল, আইলউদ্দিন চর, চরনিজাম, চর পাতিলা, ডেগরারচরসহ মেঘনা-তেঁতুলিয়ার উপকূলবর্তী মাঝের চর, চর চটকিমারা, মদনপুরাসহ বিভিন্ন চরে অতিথি পাখিদের এমন দৃশ্য দেখা যায়। পাখি পর্যবেক্ষক ও পর্বতারোহী এম এ মুহিত বলেন, বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবসহ কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবছরই তারা ভোলাসহ উপকূলীয় এলাকায় পাখি শুমারি করে থাকেন। এ অঞ্চলের মধ্যে পাখিদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভোলা জেলা। এখানে দেশব্যাপী বিপন্ন অনেক পাখি দেখা যায়। শীতকালে সাইবেরিয়া, তিব্বতসহ বিভিন্ন এলাকা বরফে ঢেকে থাকায় পাখিদের খাদ্য ও বাসস্থানের অভাবে দীর্ঘ আকাশ পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের দেশে আসে। কিছুদিন থেকে চলে যায়। তিনি আরো বলেন সর্বশেষ শুমারি অনুযায়ি উপকূলীয় এলাকাতে ৫৮ প্রজাতির অতিথি পাখি দেখা গেছে। নির্জন এসব চরে পাখিদের নিজস্বতা রক্ষা পায়। তিনি আরো জানান, চামচ ঠুটো বাটন, ইন্ডীয়ান স্কিমার, ইউরোশিয়ান উত্তরের লেঞ্জাহাঁস, নার্ন সেভেলার, ইউরশিয়ান উইজন, ব্লাক হ্যাডেট আইভিজ পাখি, সৈকত পাখি টার্ন, পালাসস গার্ল, গ্রীল সাংক, রেড সাংকসহ বিভিন্ন দুর্লভ পাখির দেখা পাওয়া যায়। সাধারণত এসব চরে জুলফি পানচিল, গাঙ্গচিল, সোনাজিরিয়া, উত্তরের লেঞ্জাহাঁস, কালোলেজ জৌরালি, ইউরেশিও গুলিন্দা, ধূসর মাথা টিটি, সিথি হাঁস, খুন্তে হাস, খয়রা চখাচোখি, ছোট পানকৌরী, ছোট বগা, বড় বগা, পিয়ঙ হাঁস, ধূসর বগা, পাতি হাঁস, কালো মাথা গাঙচিল, ছোট ধলাজিরিয়া, ছোট নর্থ জিরিয়া, গো বগা, মেটে রাজ হাঁস, পাতি বাটান, চেগা, পাতি চেগাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। চর কুকরী-মুকরীর চর-পাতিলায় দেশি-বিদেশি পাখি দেখার জন্য বন বিভাগ কতৃক নির্মিত হয়েছে পাখি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র।

এখান থেকেই এ চরের অতিথি পাখি সহজেই দেখা যায়। এ ছাড়া পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু, ছাতা, বেঞ্চ ও একটি ব্যারাকও নির্মাণ করা হয়েছে। শীতের এ সময়টাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাখি দেখার জন্য এখানে ছুটে আসেন পর্যটকরা। চর কুকরী-মুকরীতে পাখি দেখতে আসা পাখি প্রেমী আনোয়ার হোসেন বলেন, এ এলাকা প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যে ভরপুর। অতিথি পাখিদের জন্য চর কুকরি-মুকরি বিখ্যাত। পাখিদের কলকাকলি মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি করে। ভোলার বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরিফুল হক বেলাল বলেন, প্রতিবছরের মত এ বছরেও আমাদের চরগুলোতে বিপুল পরিমাণ অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে। এখানকার চরগুলো অতিথি পাখিদের জন্য বিখ্যাত। এসব পাখিদের কেউ যাতে বিরক্ত বা শিকার করতে না পারে সে জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া আছে। প্রতিটি রেঞ্জ থেকে টহল জোরদার করা হয়েছে। তারা নিয়মিত টহল দিচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত