পাবনায় দেড় মাসে ৮ খুন জনপদে আতঙ্ক

প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কাজী বাবলা, পাবনা

পাবনায় হঠাৎ করেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। চলতি নভেম্বর মাসেই ৬টি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। আর গত অক্টোবর মাসে ঘটেছে দুটি। এর মধ্যে সম্প্রতি পাঁচ দিনের ব্যবধানে চারটি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গত দেড় মাসে পাবনায় হত্যাকাণ্ড, পূর্ববিরোধ, রাজনৈতিক বিরোধ ও প্রতিশোধ পরায়ন ঘটনায় আটটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি ৬০ জন। ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে পুলিশ দাবি করেছে। হত্যাকাণ্ড ছাড়াও বেড়েছে ছিনতাই, সংঘর্ষ, ভাঙচুর, লুটপাট, অপমৃত্যুসহ নানা অপরাধ।

পাবনা জেলা পুলিশ ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সর্ব শেষ তথ্য অনুযায়ী, গত রোববার রাত নয়টার দিকে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ধুলাউড়ি ইউনিয়নের রাউতি উত্তরপাড়া স্কুলের পাশে সাবেক এক চরমপন্থি সদস্য বাকুল মিয়া (৪৫) কে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত বাকুল মিয়া রাউতি গ্রামের রওশন আলীর ছেলে। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। নিহত বাকুলের ছেলে রাসেল মিয়া জানান, চরমপন্থি জীবন থেকে ফিরে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন বাবা। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে সংসার চালাতেন তিনি। ১৬ নভেম্বর বাড়ি থেকে বের হয়ে নিজের মাছের খামারে যাচ্ছিলেন পাবনা সদর উপজেলা মৎসজীবী দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জালাল উদ্দিন (৪৫)। পথিমধ্যে বেতেপাড়া মোড়ে পৌঁছালে হেমায়েতপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সদস্য মুন্তাজ আলী এবং তাদের লোকজন জালালকে কুপিয়ে হত্যা করে। ১৭ নভেম্বর রাতে পাবনা শহরে তুষার হোসেন (১৬) নামের এক কিশোরকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত তুষার ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর স্কুলছাত্র সিয়াম হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিল। ১৮ নভেম্বর ঈশ্বরদীর রূপপুরে প্রকাশ্যে ওয়ালিফ হোসেন মানিক (৩৫) নামের এক যুবলীগ কর্মীকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ২০২৩ সালের ১৭ জুন ছাত্রলীগ কর্মী তাফসির আহম্মেদ মনা হত্যা মামলার আসামি ছিলেন তিনি। জামিনে বের হয়েই প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারান মানিক। ৮ নভেম্বর আতাইকুলা থানার গঙ্গারামপুরে আসিফ হোসেন (৩২) নামের মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ৭ নভেম্বর রাতে এলাকায় জলসা শুনে বাড়ি ফেরার পথে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। ১ নভেম্বর আতাইকুলা থানার তৈলকুপি গ্রামে ভ্যানচালক রবিউল ইসলামকে (৪৫) দুর্বৃত্তরা হত্যা করে তার ভ্যানটি নিয়ে লাশ গুম করার জন্য পুকুরের পানিতে ফেলে পালিয়ে যায়। পরের দিন পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। একই দিন সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়ার কাঞ্চন পার্কের সামনে ভাসমান অবস্থায় ২২ বছরের এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয়। তাদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। গত ১০ অক্টোবর ঈশ্বরদীতে একটি লিচু বাগান থেকে নয়ন হোসেন (২৮) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ইলেকট্রিক্যাল মেকানিক ছিলেন। নিহত নয়নের মুখমণ্ডল ও গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। গত ৩০ অক্টোবর সুজানগরের নাজিরগঞ্জ ফেরীঘাট এলাকার পদ্মা নদী থেকে মুকুল হোসেন (৪০) নামে এক পুলিশ কর্মকর্তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মুকুল হোসেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার এএসআই ছিলেন। ৩১ অক্টোবর সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়ার সিংহনগর স্কুলের সামনে পদ্মা নদীর তীর থেকে ১২ বছরের এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) পাবনার সভাপতি আব্দুল মতীন খাঁন বলেন, ৫ আগস্টের পর পুলিশ প্রশাসন এখনও মাঠে পুরোপুরি সক্রিয় না থাকার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। যখন অপরাধীর বিচার হবে না, তখন অন্য অপরাধীরা আরো উৎসাহি হবে। প্রশাসন এখনই লাগাম টেনে না ধরলে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) রেজিনূর রহমান বলেন, অতীতের রেকর্ড যদি আমরা পর্যালোচনা করে দেখা যায় পাবনা জেলায় প্রতিমাসে সাধারণত ৪ থেকে ৫টি হত্যা মামলা হয়ে থাকে। চলতি নভেম্বর মাসে ৬টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে ৫টি হত্যা মামলা হয়েছে। আর একটি মৃত্যুর মামলা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসলে বোঝা যাবে সেটি হত্যা নাকি অপমৃত্যু। সেটি সন্দেহজনক হিসেবে আছে। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে প্রায় সবগুলো মামলার রহস্য উদঘাটন হয়েছে এবং অনেক আসামিকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। রেজিনূর রহমান আরো বলেন, প্রতিমাসে পাবনা জেলার মামলা পর্যালোচনা করলে সহজেই বোঝায় যায় এগুলো স্বাভাবিক একটি বিষয়। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পুলিশের ওপর আস্থা রাখুন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সংকট কাটিয়ে পুলিশ আরো বেশি সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। মানুষের আস্থা হারানোর কিছু নেই।