বগুড়ার তরতাজা ছেলের নাম তরুন খন্দকার। বাবা ফিরোজ খন্দকার অকালে ঝরে যাওয়ায় মা সাহিদা বেগমের আদরের ছোট ছেলে। বগুড়ার কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের জোগার পাড়া গ্রামেই তার বাস। দেশ রক্ষায় ঘরে বসে থাকতে না পেরে গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিতে এসেছিল সাতমাথায়। পুলিশ বাহিনী খুব কাছ থেকে গুলি করে তরুনকে। তার ভুরি বের হয়ে যায়। বাবা হারা তরুনের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন গুড়েবালি। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পুরো পেট রক্ত দিয়ে ভরা। দ্রুত সার্জনরা অপারেশন করেন এবং জানায় ক্ষুদ্রান্ত, বৃহদন্ত ফেটে গেছে। কলস্টমি করা হয় কিন্তু বাম পা নড়া চড়া করতে পারে না। ডাক্তারদের পরামর্শে গত ২৪ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নার্ভ প্লেক্সাস ইনজুরি হয়েছে বলে ডায়াগনসিস করা হয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত তরুন পঙ্গু অবস্থায় তার বাড়িতে অবস্থান করছে। মা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ছেলের পানে, মুখে কোন কথা নেই, চোখ ভরা জল, কথা বলতে গেলেই চোখের জল আর বাঁধ মানে না। কিন্তু চোখের জল বেশি সময় আটকে রাখা যায় না। অন্তর্দহে সমবেদনা জানাতে বগুড়ার চিকিৎসক আব্দুল বাতেন খোঁজ-খবর নেয় এবং তার বন্ধু নিউরোসার্জন ডাক্তার মাহফুজ এর সাথে পরামর্শ করেন। যারা নিজের কথা না ভেবে অর্থাৎ আত্মচিন্তায় নিমগ্ন না থেকে পরের জন্যে বা দেশ ও দশের হিতার্থে কাজ করে তারাই মহৎ। মহৎ মানুষ হীনতা, দীনতা, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা, পরশ্রীকাতর ইত্যাদি দোষ হতে দূরে থাকে এবং সর্বদা সব মানুষের মঙ্গল চিন্তা করে। কাজের মধ্য দিয়ে কল্যাণ সাধন করাই তাদের ব্রত। এ মনমানসিকতা নিয়ে ডাক্তার এমএ বাতেন তাকে নিউরোসাইন্স ইনস্টিটিউট এ চিকিৎসার ব্যবস্থা নেন। গত ২০ নভেম্বর মানবিক ডাক্তার বাতেনের সার্বিক সহযোগিতায় ঢাকা নিউরোসাইন্স হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেও যদি সফল না হয় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছেন ডাক্তার এমএ বাতেন। সবার সাথে মিলেমিশে জীবন ধারণ এবং সুখে দুঃখে একে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যেই জীবন যথার্থ সার্থকতা নিহিত। নিজের স্বার্থের জন্যই কেবল জীবন নয়। মানুষ সমাজবদ্ধ, সহানুভুমিশীল জীব বলেই আত্মস্বার্থে মগ্ন থাকা তার স্বভাব বিরুদ্ধ। মানুষ হয়ে জন্মাইলেই মানুষ হয় না। চাই মনুষ্যত্ব অর্জনের দীক্ষা। মানবসেবা, সামাজিক মানুষের সেই দীক্ষার যথার্থ মন্ত্র। শত সমস্যার মধ্যেও আজ আবার নতুন করে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবার স্বপ্ন দেখছে। স্বপ্ন দেখছে দিনবদলের সমৃদ্ধতর এক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের। নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্র তৈরি করাই এ সময়ের বড় কাজ। এটি বাস্তবায়নে ডাক্তার এমএ বাতেন এমন মহতী কাজে অংশীদারিত্বে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।