চলতি মৌসুমে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট দিয়ে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এর আগে গত সোমবার জেলা প্রশাসন থেকে জাহাজ চলাচলের অনুমতি পেয়ে কেয়ারী সিন্দাবাদ সেন্টমার্টিন যাওয়ার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছিল। কিন্তু পর্যটক সংকটের কারণে জাহাজ কর্তৃপক্ষ গত বুধবার সন্ধ্যায় সেন্টমার্টিন যাত্রা বাতিল করে। কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে একমাত্র কেয়ারি সিন্দাবাদ চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড লিমিটেডে’র কক্সবাজারের ব্যবস্থাপক নুর মোহাম্মদ বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে জাহাজ ছাড়ার অনুমতি ছিল। কিন্তু যাত্রী সংকট থাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার সেন্টমার্টিন যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। কেয়ারিতে ৩৫০ জন যাত্রী বহনের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে জানিয়ে নুর মোহাম্মদ বলেন, গত বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০০টি টিকেট বিক্রি হয়নি। মুলত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সেন্ট মার্টিনে রাত যাপনের অনুমতি না থাকায় পর্যটকরা সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যেতে আগ্রহ দেখায়নি। এ কারণে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে জাহাজ চলাচলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১ ডিসেম্বর থেকে দ্বীপে ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের রাত যাপনে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে। ফলে তখন পর্যটকরা সেন্টমার্টিনমুখী হবেন।
তবে আবারো দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় মানুষ কম ঘুরতে আসবেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত এবং জাহাজ চলাচলের বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটি জাহাজ চলাচলের ঘাট নির্ধারণ করা হয়েছে। মন্ত্রাণালয়ের দেয়া নির্দেশনা কার্যকর করতে এ সংক্রান্ত যৌথ কমিটি কাজ করবে। দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে। এসব নির্দেশনা মেনে পর্যটকেরা আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন। গত মঙ্গলবার রাতে পর্যটকের জন্যে সেন্টমার্টিন উন্মুক্ত করার জন্যে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও ভ্রমণ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় কাজের সুবিধার্থে মন্ত্রণালয়ের করে দেয়া ৬ সদস্যের কমিটিতে আরো পাঁচজন সদস্য। কমিটির সদস্যরা হলেন, কক্সবাজার প্রেসক্লাব সভাপতি, কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি, সেন্টমার্টিনে চলাচলকারী জাহাজ মালিক সমিতির সভাপতি, সেন্টমার্টিন হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি, কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনের (টুয়াক) সভাপতি। কমিটির আহ্বায়ক ও কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী জানান, কাজের সুবিধার্থে পর্যটনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের প্রতিনিধিদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
পর্যটকদের ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে কমিটির সদস্যরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও মনিটরিং করবেন।
গত ১৯ নভেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সাবরীনা রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে যাওয়া পর্যটক ও অনুমোদিত জাহাজ নিয়ন্ত্রণে যৌথ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আদেশে বলা হয়, সেন্টমার্টিনে যেতে হলে পর্যটকদের নিবন্ধনসহ নানা বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। ওই মন্ত্রণালয়ের গঠন করা যৌথ কমিটি এসব বিষয় দেখভাল করবে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতের কারণে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন রূটে পর্যটনের জাহাজ চলাচল বন্ধ হওয়ার পর ইনানী সৈকতে স্থাপিত নৌ-জেটি ব্যবহার করে সেন্টমার্টিনে পর্যটক পরিবহন হতো। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে ইনানী জেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখান থেকেও জাহাজ চলাচলে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়। এ দিকে ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট থেকে জাহাজ চলাচলে তেমন জটিলতা নেই বলে জানান কর্নফুলী এক্সপ্রেসের কক্সবাজারের ব্যবস্থাপক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় দানার সময় জেটির যে অংশ ভেঙেছে সেটি জেটির শেষ অংশে। জাহাজে উঠার জেটির সিঁড়ি ঠিক আছে। ফলে ১ ডিসেম্বর থেকে ওই জেটি দিয়ে তারা জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানান।