চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ-আলমডাঙ্গা সংযোগ সড়কে নবগঙ্গা নদীর ওপর পুরাতন সেতু ভেঙে চলছে নতুন সেতু নির্মাণের কাজ। তবে নদী পারাপারে ব্যবস্থা করা হয়নি বিকল্প কোনো সড়কের। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এ সড়কে চলাচলরত এলাকাবাসী। নির্মাণাধীন সেতুটির বিকল্প মানুষের চলাচলের জন্য পাশেই অস্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হয়েছে বাঁশের সাঁকো। সেই সাঁকোর অবস্থায় বেহাল দশা। তবে তা দিয়ে শুধু মানুষ চলাচল করতে পারলেও কোনো যানবাহন চলে না। কিন্তু বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় ভারী যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। অনেকে না জেনে বিভিন্ন পরিবহনে সেতু পর্যন্ত এসে আবার ফিরে যাচ্ছেন। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এই সেতু দিয়ে নিয়মিত পারাপার হওয়া তিনটি ইউনিয়নের ২০ গ্রামের অসংখ্য যানবাহনসহ কয়েক হাজার মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ঠিকাদার আত্মগোপনে থাকায় বন্ধ হয়ে পড়েছে নির্মাণ কাজ। এতে একদিকে যেমন বেড়েছে জনদুর্ভোগ, অন্যদিকে দেখা দিয়েছে অনশ্চিয়তা। দ্রুত সমাধান চান স্থানীয়রা। জানা গেছে, চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি প্রায় ৬৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ-খাসকররা সড়ক ও সরোজগঞ্জ-আইলহাস সড়কের পুনঃসংস্কার কাজসহ প্রায় ২৩ কিলোমিটারের ৫টি রাস্তার কাজ শুরু হয়। কাজটি পান যৌথভাবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ, মোতাহার ব্রাদার্স ও জাকাউল্লাহ অ্যান্ড ব্রাদার্স। এর মধ্যে সরোজগঞ্জ-খাসকররা ও সরোজগঞ্জ-আইলহাস সড়কের দুটিতেই রয়েছে নবগঙ্গা নদী। এ ছাড়াও ৯টি কালভার্ট রয়েছে। পুরাতন সেতু ও কালভার্ট ভেঙে ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এ সব উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ার কথা আগামী ২০২৬ সালের ১৮ জানুয়ারি। নির্মাণ কাজ শুরুর ১০ মাসে এ পর্যন্ত মাত্র ৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শুরু থেকেই নির্মাণ ধীরগতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে এলাকাবাসী। এর মধ্যে, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় অভিযোগ পেয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃকপক্ষ। পরে আবার কাজ শুরু হলে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থমকে গেছে কাজ। তিনজন ঠিকাদারের মধ্যে অন্যতম মোজাহার এন্টারপ্রাইজের মালিক জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সৈয়দ ফরিদ আহম্মেদ শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে তিনিও গাঢাকা দেয়ায় ঠিক রকম শ্রমিকরা কাজে যোগ দেননি। এতে অনেকটায় বন্ধ হয়ে পড়েছে উন্নয়ন কাজ। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীর। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সরোজগঞ্জ-খাসককরা সড়কের বোয়ালিয়ায় নবগঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত সেতু কাজ বন্ধ রয়েছে। সেখানে পাওয়া যায়নি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রতিনিধি বা শ্রমিকদের। নদীর দুই ধারে যাত্রীদের অপেক্ষায় রয়েছেন বেশ কিছু পাখিভ্যান চালক। স্থানীয়রা জানান, সড়ক দুটি সরোজগঞ্জ থেকে খাসকররা ও আইলহাস ভায়া আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের যাওয়ার প্রধান রাস্তা। এ ছাড়াও সব এলাকার মানুষের জেলা শহরে যাওয়ার জন্য চলাচল করতে হয় এসব রাস্তা দিয়ে। আলমডাঙ্গা ও সদর উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন এই সেতু দুটি ব্যবহার করে আসছেন। তা ছাড়া স্থানীয় কৃষকদের মাঠ থেকে ফসল আনতেও ব্যবহার করা হয় এই দুটি সেতু। বিকল্প রাস্তা না থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। এ ছাড়া স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীরাও পড়েছে বিপাকে। গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু দুটি ভাঙার আগে কাছাকাছি কোনোও বিকল্প ব্যবস্থা না রেখে তড়িঘড়ি করে সেতুটি ভেঙে ফেলা হয়। বাঁশ দিয়ে পায়ে হেঁটে পারাপারের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বাঁশের সাকো নির্মাণ করা হলেও সাঁকোটি নড়বড়ে হওয়ার কারণে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়। যানবাহন পারাপারের বিকল্প কোনো রাস্তা নির্মাণ না করায় মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। অথচ প্রতিদিন এই রাস্তা দুটি দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ আলমডাঙ্গা ও সদর উপজেলাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দফতরে যাওয়া-আসা করেন। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় ৫ কিলোমিটার ঘুরে পার্শ্ববর্তী মহাম্মদজমা ঘুরে আসতে হয়। স্থানীয় মাদরাসার অধ্যক্ষ আশরাফুল ইসলাম বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ ভাঙা হয়েছে অথচ বিকল্প কোনো পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়নি। বিকল্প রাস্তা হিসেবে মহাম্মজমা গ্রাম ঘুরে ছোট যানবাহনে মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু ওই এলাকার রাস্তা প্রশস্ত কম হাওয়ার কারণে অনেক বড় বা ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারে না। গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্রিজের অন্য পাশে যেতে হলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। দ্রুত পারাপারের জন্য ভালো কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না করা গেলে মানুষের কষ্ট আরো বাড়বে বলে আমি মনে করি। নয়ন আহমেদ নামে এক ব্যক্তি বলেন, মুমূর্ষু রোগীদের নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক রাস্তা ঘুরে হাসপাতালে যেতে হয়। এতে অনেককে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। অতিদ্রুত ব্রিজটির নির্মাণকাজ শেষ করার দাবি জানাই। কয়েকজন অটো ও পাখিভ্যানচালক বলেন, ‘বিকল্প রাস্তা না করে সেতু নির্মাণ শুরু হওয়ার ফলে যাত্রীদের পাশাপাশি আমাদের আয় কমেছে। যে বিকল্প রাস্তা, সেটা দিয়ে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল সম্ভব নয়।’ সবজি ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম বলেন, পণ্য নিয়ে বাজারে প্রবেশের সহজ রাস্তা বন্ধ। বিকল্প রাস্তা না থাকায় ৫ কিলোমিটার ঘুরে সরোজগঞ্জ বাজারে প্রবেশ করতে হয়। বিকল্প রাস্তা না থাকায় অনেক ভোগান্তি হচ্ছে জনসাধারণের। সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে।’ এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে ঠিকাদার পিছুটান দিয়েছে। যার কারণে কাজে একটু বিলম্ব হচ্ছে। এখানে ফান্ডের কোনো সমস্যা নেই, অন্য কোনো সমস্যাও নেই। আমরা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে সমন্বয় করে বিকল্প উপায়ে কাজ পুনরায় শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছি। তবে, চেষ্টা করা হচ্ছে এই কার্যাদেশ অনুযায়ীই কাজ সম্পন্ন করার।