চাঁদপুরের ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল চাঁদপুর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি প্রায় দুই বছর যাবত বন্ধ রয়েছে। এ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি মেরামত করা হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। দীর্ঘ সময় অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় যন্ত্রাংশগুলো অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে যাওয়ায় শীত মৌসুমের শুরুতেই লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিতে চাঁদপুরবাসী। অথচ সংকট সমাধানে দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। নিয়মিত মেরামতের জন্য বন্ধ হলেও প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি। তবে চলতি বছরের শেষে কেন্দ্রটি চালু হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানালেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সরেজমিন দেখা গেছে, এ চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটির স্টিম টারবাইন ইউনিটের যন্ত্রগুলো ঢেকে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এসব যন্ত্রাংশগুলো অনেকটা অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে যন্ত্রাংশগুলো অকার্যকর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান প্রকৌশলীরা। শহরের গুনরাজদির বাসিন্দা মোস্তফা কামাল এবং খান সড়কের বাসিন্দা মাসুদ ডাক্তার জানান, বিগত বছরগুলোতে শীতের আগ থেকেই লোডশেডিং কমেছে এবং শীতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল।
তবে এ বছর শীতের আগ থেকেই দিন ও রাতে লোডশেডিং অব্যাহত তাকছে। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে শহরের উৎপাদনমুখী কারখানা ও গ্রামের সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হিসেবে ১৫০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। পুনরায় ২০২৩ সালের মার্চে যান্ত্রিক ক্রুটির কারণে বুস্টার যন্ত্রটিও বন্ধ হয়ে যায়। দুই দফা মেরামত ও দেড় বছর বন্ধ থাকার পর চলতি বছর মে মাসে ফের উৎপাদনে আসে ১০০ মেগাওয়াটের গ্যাস টারবাইন ইউনিটটি। তবে গ্যাসের অভাবে শতভাগ উৎপাদনে যেতে পারছে না এ ইউনিটটি। আর দুই বছরেও মেরামত সম্পন্ন না হওয়ায় বন্ধ রয়েছে ৫০ মেগাওয়াটের স্টিম টারবাইন ইউনিট। উৎপাদনে কর্মরত কর্মকর্তারা জানান, গ্যাস টারবাইনে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে ব্যয়, সেই একই ব্যয়ে স্টিম টারবাইন ইউনিটে বাড়তি ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্বব হতো। বর্তমানে গ্যাস টারবাইনের মাধ্যমে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফুয়েল খরচ প্রায় ৪.২৫ পয়সা। দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকায় এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, তবে চলতি বছরের শেষ দিকে স্টিম টারবাইন ইউনিটটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কর্মকর্তারা আরো জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্যাস টারবাইন ইউনিটের যন্ত্রাংশ কেনা ও মেরামতের কাজে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ২১ হাজার ডলার।
এ ছাড়া স্টিম টারবাইনের জন্য ব্যয় হবে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুরি বলেন, এই মুহূর্তে কেন্দ্রের একটি টারবাইন ইউনিট কার্যকর আছে। স্টিম টারবাইন ওভার রোলিং এখন বন্ধ। এটির জন্য চায়নার একটি বিশেষজ্ঞ কোম্পানির সঙ্গে আমরা চুক্তিবদ্ধ আছি। তারা এসে এটি মেরামতের জন্য খুব শিগগিরই কাজ শুরু করবে। চাঁদপুর শহরের নিউ ট্রাক রোডের গুনরাজদি পাওয়ার হাউজ এলাকায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করে চীনা কোম্পানি চেংদা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। ২০১২ সালের মার্চ মাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে কেন্দ্রটি।