শত বছরের পালং খাল উদ্ধারে তৎপর প্রশাসন
প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শরীয়তপুর প্রতিনিধি
শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শরীয়তপুর জেলা সদরের পালং খাল নগরের ফুসফুস। শুধু জলাবদ্ধতা নিরসন নয় এ খালের সাথে আশপাশের কয়েক হাজার হেক্টর কৃষি জমির সেচ সংযোগ। কিন্তু কালের আবর্তে দীর্ঘ প্রায় দশ বছরেরও বেশি সময় থেকে দখল, ভরাট ও দূষণের কারণে প্রায় মৃত। বর্ষায়ও নদীর সাথে সংযুক্ত হয় না খালটি। খালটি প্রবাহমান করতে দীর্ঘদিন থেকেই আন্দোলন করে আসছিল বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। কিন্তু দেখার যেন ছিল না কেউ। সব প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে নতুন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন যোগদানের পরে পালং খালকে অগ্রাধিকর দিয়ে গত ২৪ নভেম্বর শুরু হয় দুই কিলোমিটারব্যাপী পরিচ্ছন্নতা, পুনঃ খনন ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কাজ। এতে শহরবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্দীপনা। তবে খালটিকে সম্পূর্ণরূপে প্রবাহমান করার দাবিও জানিয়েছেন নগরবাসী। খালটিকে প্রবাহমান করা না গেলে আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে জেলা শহর বসবাসের অনুপযোগি হয়ে যাবে বলে আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন সচেতন মহল। পালং খালটি জেলা শহরের রাজগঞ্জ কৃর্তিনাশা নদী থেকে শুরু হয়ে জেলা শহরের মধ্যদিয়ে রুদ্রকর ইউনিয়নের মাকসাহার আংগারিয়া বুড়িরহাট খালে সংযুক্ত।
৭ কিলোমিটার খালটি দীর্ঘ দিনের দখল, ভরাট ও দূষণের কবলে পড়ে প্রায় দশ বছর যাবত মৃতপ্রায়। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় শরীয়তপুর পৌরসভা গত ২৪ নভেম্বর থেকে রাজগঞ্জ ব্রিজ এলাকা থেকে শুরু হয়েছে পরিচ্ছন্নতা, পুনঃ খনন ও অবৈধ দখলমুক্ত করার কাজ।
এ খালটি প্রবাহমান হলে মারাত্মক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে শরীয়তপুর জেলা শহর। কেন্দ্রীয় নদী পরিব্রাজক দলের সহ-সভাপতি ও শরীয়তপুর জজকোর্টের আইনজীবি এ্যাড. নুরুজ্জামান সিপন বলেন, পালং খাল আমাদের শত বছরের ঐতিহ্য। দশ বছরেরও বেশি সময় থেকে পালং খাল বাচাও সংগঠনের মাধ্যমে জেলা শহর রক্ষায় মৃত প্রায় খালটিকে প্রবাহমান করার দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু আমাদের আওয়াজ কারোর কানেই পৌছায়নি। বর্তমান জেলা প্রশাসক যোগদানের পর জেলা শহরের অন্যতম জলাবদ্ধতা নিরসের মাধ্যম এই খালটি প্রবাহমান করার উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। পালং খালটি প্রবাহমান করা না গেলে আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে জলাবদ্ধতা ও দূষণের কবলে পড়ে জেলা শহর বসবাসযোগ্যতা হারাবে। আমরা প্রত্যাশা করব, চলমান পরিচ্ছন্নতা, পুনঃ খনন ও দখল উচ্ছেদের এই কাজ খালটিকে প্রবাহমান করা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও পারং বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, এক সময়ের প্রবাহমান পালং খালটি শরীয়তপুর পৌরসভা এলাকার পানি নিষ্কাশনের অন্যতম মাধ্যম। দীর্ঘ বছর থেকে খালটি প্রবাহমান না থাকায় জেলা শহর এখন হুমকির মুখে। জেলা শহরকে রক্ষার স্বার্থে কিছু কিছু জায়গা অধিগ্রহণ করে হলেও খালটিকে আবার আগের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে মেনে পৌরসভাকেও ইমারত নির্মাণের পদক্ষেপ নিতে হবে।
তবেই আগামীর মহা বিপর্যয় থেকে জেলা শহরকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। তাই আই সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি রাখবো যাতে শহর রক্ষায় কোন আপোষ না করা হয়। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও শরীয়তপুর পৌরসভার প্রশাসক পিংকি সাহা বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সার্বিক সহযোগিতা ও নির্দেশনায় আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পালং খালটি প্রবাহমান করতে কাজ শুরু করেছি। শুধু পালং খালই নয় পৌরসভা এলাকার ভরাটকৃত ও দখলকৃত সব খাল পর্যায়ক্রমে আমরা প্রবাহমান করব। এতে যে কোন কঠোর পদক্ষেপ নিতে আমরা প্রস্তুত। জেলা প্রশাসক এ কাজ বাস্তবায়নে পৌরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেছেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, আমি যোগদানের পর জেলার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর প্রধানদের সাথে বৈঠক করে অগ্রাধিকার তালিকা প্রস্তুত করে কাজ শুরু করেছি। জেলা শহর রক্ষায় পালং খালটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার ভূমি ও পৌরসভাকে সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছি। সে অনুযায়ী পালং খাল প্রবাহমান করতে কাজ শুরু হয়েছে। খালটি প্রবাহমান করতে আমরা বদ্ধ পরিকর।