সড়কের কাজ শেষ না করেই ঠিকাদার পালিয়েছে
পাঁচ উপজেলার মানুষ দুর্ভোগে
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
দিনাজপুর শহর থেকে সেতাবগঞ্জ হয়ে বোচাগঞ্জের বকুলতলা। ২০২৩ সালের জুন মাসে এই রুটের কয়েকটি বাজারে আরসিসি সড়ক ও সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে চার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজটি পায় কুমিল্লার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘মাসুদ হাইটেক্স’। কিন্তু ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করেই ঠিকাদার পালিয়ে যান। এখন এই সড়কটি পাঁচ উপজেলার মানুষের গলার কাটায় পরিণত হয়েছে। প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এরই মধ্যে একাধিক ব্যক্তি এই সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন। ধুলোর কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন বিপাকে। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে এমন অবস্থা থেকে মুক্তি চান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনাজপুর শহর থেকে বোচাগঞ্জের বকুলতলা পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ৪৫ কিলোমিটার। এই সড়কের মঙ্গলপুর, মন্ত্রীর বাজার, পুলহাট, মাধবপুর, বটতলী, ধুকুরঝারি ও সেতাবগঞ্জ বাজারের অংশে আরসিসি ঢালাই সড়ক নির্মাণের কাজ পায় মাসুদ হাইটেক্স। এ কাজের মধ্যে দুটি সেতু নির্মাণের কথা রয়েছে। ৩৬ কোটি টাকার এ প্রকল্প ছাড়াও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি জেলার এমন আরো তিনটি প্রকল্পের কাজ করছে। চারটি প্যাকেজের এই কাজের জন্য বরাদ্দ ছিল ১০০ কোটি টাকা। সরেজমিনে জানা গেছে, বোচাগঞ্জের বকুলতলা রুটের যে নয়টি বাজারে কাজ বন্ধ রয়েছে ওই এলাকার ব্যবসায়ী এখন ধুলোর সঙ্গে যুদ্ধ করে ব্যবসা করছেন। দিনে কয়েকবার পানি ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না।
এ ছাড়া অসম্পূর্ণ রাস্তার খানাখন্দে পড়ে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। নির্মাণাধীন সেতুর পাশে থাকা বেইলি ব্রিজে স্লিপার সরে গিয়েও দুর্ঘটনা ঘটছে। রাতের বেলায় দুর্ঘটনার শঙ্কা আরো বাড়ে। মঙ্গলপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, রাস্তারের এক অংশের ঢালাই কাজ শেষ হয়েছে একবছর আগে। আরেক অংশের কোনো খবর নেই। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে বাস-ট্রাক চলাচল করে। ধুলোর আস্তর পড়ে যায়। কেউ এ বাজারে আসতে চান না। পুরো বাজারটি সারাদিন ধুলোয় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। দিনে কয়েকবার পানি ছিটিয়েও কাজ হয় না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকদের তো দেখাই পাওয়া যায় না। তারা গত ৫ আগস্ট কাজ রেখে পালিয়ে গেছেন।’ মন্ত্রীর বাজারের ধনেশচন্দ্র রায় বলেন, আমার সামনেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় একজনের পা ভেঙে যেতে দেখেছি। প্রতিদিনই কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে। আবদুল খালেক নামে যাত্রীবাহী বাসের এক চালক বলেন, গত এক বছর ধরে এই রাস্তায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। যাত্রীরা এখন বাসে উঠতে চান না। ভাঙা রাস্তায় ঝাকুনির কারণে অনেকেই বমি করে ফেলেন। প্রতিদিনই বাসের কোনো না কোনো যন্ত্রাংশ বিকল হচ্ছে। এই রাস্তায় ভবিষ্যতে স্বাভাবিক চলাচল করা নিয়েও তিনি সংশয় প্রকাশ করেন। বোচাগঞ্জের বকুলতলা রুটে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চালান আব্দুল মোমিন। প্রতিদিনই তাকে যন্ত্রাংশ মেরামত বাবদ অতিরিক্ত খরচ করতে হয়। এতে তার আয়ের একটি বড় অংশই ব্যয় হয়ে যায়। বলেন, এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা খুব কষ্টকর। প্রচুর বালু ওড়ে। আর বাজার অংশের কথা তো বলে শেষ করা যাবে না। প্রতিদিন ইজিবাইক বিকল হয়। কোনো না কোনো যন্ত্রাংশ ভেঙে যায়। ২০ টাকা আয় করলে ১৫ টাকা মেরামত করতেই শেষ হয়ে যায়।’
দিনাজপুর সড়ক ও জনপদের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আমানুল্লাহ আমান বলেন, মাসুদ হাইটেক্স নামে কুমিল্লার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দিনাজপুরের এরকম বাজার অংশের ঢালাইসহ সেতু নির্মাণের চারটি প্যাকেজ পেয়েছে। ওই প্যাকেজে প্রায় ১০০ কোটি টাকার মতো বরাদ্দ ছিল। তিনি আরো বলেন, দিনাজপুর থেকে সেতাবগঞ্জ বকুলতলা এই প্যাকেজের জন্য প্রায় ছত্রিশ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। ওই অংশে এখন পর্যন্ত তারা ৩০ শতাংশ কাজ করতে পেরেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করতে আরো এক বছর সময় বাড়াতে বলছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।