পরিবারের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা বাড়াতে বিদেশ পাড়ি দেয়া দেশের বেকার যুককদের জন্য নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার। কিন্তু সেটি যখন ভাগ্যের চাকাকে উল্টো দিকে ঘুরায়, তখন পরিবার হয় নিঃস্ব ঘটে জীবন হানি। এমনি ঘটনায় শরীয়তপুর-মাদারীপুরের ২৪ তরুণ ও যুবকের পরিণতি এখন জীবন-মৃত্যুর অনিশ্চিত গন্তব্যে। কোথায় আছেন কি অবস্থায় আছেন জানে না পরিবার। অথচ এরই মধ্যে নানা অযুহাতে মাফিয়াদের দোষর মানবপাচারকারীরা হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। ৯ মাসেরও অধিক সময় থেকে মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে শরীয়তপুর-মাদারীপুরের ২৪ জন নিখোজ রয়েছে।
গতকাল রোববার বেলা ১২টার দিকে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে লিবিয়া থেকে ছেলে-সন্তানাদের ফিরে পাওয়ার দাবিতে স্বজনরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। নিখোঁজদের স্বজন সূত্রে জানা যায়, উন্নত জীবনের আশায় শরীয়তপুরের আংগারিয়া ইউনিয়নের তুলাতলা গ্রামের নূর ইসলাম খানের ছেলে মানবপাচারকারী কামরুজ্জামান টুন্নু খা ও রাসেদ খার মাধ্যমে ইতালির উদ্দেশ্যে গ্রাম ছেড়েছিল তুলাতলার ১৫ জন ও পার্শ্ববর্তী মাদারীপুরের ৯ জন যুবক। অবৈধ পথে লিবিয়া থেকে ভূমধ্য সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁছানোর কথা ছিল তাদের। কিন্তু লিবিয়াতে মাফিয়া চক্রের হাতে পড়ে গত ২২ মার্চ থেকে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। এরপর থেকেই শরীয়তপুরের তুলাতলা, চর যাদবপুর, চর চটাং ও মাদারীপুরের নতুন বাজার, জাগীর, সূর্যমনি গ্রামের ২৪ যুবক নিখোঁজ। কেউ নাতি, কেউবা ছেলে আবার কেউ স্বামী হারিয়ে ৯ মাস যাবত পাগলপ্রায়। ইতালি পৌঁছে দেয়ার কথা বলে দালাল কামরুজ্জামান টুন্নু খা ও রাসেদ খা ভুক্তভোগী প্রত্যেক পরিবার থেকে নিয়েছেন ১২ থেকে ১৮ লাখ টাকা। লিবিয়াতে ২৪ যুবক নিখোঁজ হওয়ার পরে দালালরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। পরিবার আইনের আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করলে উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে দালাল কামরুজ্জামান টুন্নু খা ও রাসেদ খার বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ। নিখোঁজরা হলেন* শরীয়তপুরের তুলাতলা এলাকার চরচটাং গ্রামের জাহাঙ্গীর মোড়লের ছেলে রফিক মোড়ল, ইকবাল কাজীর ছেলে শামীম কাজী, আব্দুল মান্নান ওজার ছেলে মিরাজ ওজা, চর নেয়ামাতপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান খানের ছেলে আতিকুর রহমান, সলিম জমাদ্দারের ছেলে রাশিদুল ইসলাম, বোরহান মৃধার ছেলে সিরাজ মৃধা, দক্ষিণ ভাষাণচর গ্রামের সালাম আকনের ছেলে দিদার হোসেন, ইদ্রিস আলী খার ছেলে আমিনুল ইসলাম, সুফিয়ার সরদারের ছেলে ফারুক সরদার, দরিচর দাদপুর গ্রামের হাতেম শেখের ছেলে জাফর শেখ, কদমতলী গ্রামের সালমান শিকদারের ছেলে শাহিন শিকদার, দক্ষিণ মধ্যপাড়া গ্রামের চুন্নু ভূইয়ার ছেলে আল আমিন, চর যাদবপুর সিরাজ মোল্লার ছেলে সাইদ মোল্লা, মানিক ফরাজীর ছেলে শহিদুল ফরাজী, স্বর্ণঘোষ গ্রামের আব্দুল মালেক ফকিরের ছেলে আল আমিন ফকির। এছাড়াও মাদারীপুরের ত্রিভাগদি গ্রামের রহিম হাওলাদারের ছেলে শাহজাহান হাওলাদার, জাফরাবাদ গ্রামের ইউনুস শিকদারের ছেলে দিপু শিকদার, সূর্যমনি গ্রামের ফারুক পেদার ছেলে সাইফুল ইসলাম, জাগির গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে পারভেজ খান, চাপাতলী গ্রামের শাহ আলম সরদারের ছেলে সরদার সাকেবুল, নতুন বাজার গ্রামের খালেক মোল্লার ছেলে আলনিদ রিমন মোল্লা, হাবিব হাওলাদারের ছেলে সিয়াম হাওলাদার, আব্দুল বেপারীর ছেলে নাহিদ বেপারী, ডাসার থানার হাবিব বেপারীর ছেলে নাইম হোসেন বেপারী। শরীয়তপুরের দক্ষিণ ভাষাণচর এলাকার নিখোঁজ ফারুক সরদারের বাবা সুফিয়ান সরদার বলেন, যে কোনো মূল্যে আমাদের সন্তানদের ফেরত চাই। সরকার আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিয়ে দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবে* এটাই এখন আমাদের চাওয়া। নিখোঁজ আতিকুর রহমানের বাবা মান্নান খান বলেন, দালাল রাসেদ ও টুন্নু আমার কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা নিয়েছে ইতালি পৌঁছে দেবে বলে। কিন্তু গত মার্চের ২২ তারিখ থেকে আমার ছেলেসহ ২২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এখন আর আমরা টাকা চাই না, আমাদের সন্তানদের ফেরত চাই।