জলাবদ্ধতায় ৫৬ হাজার বিঘা জমির বোরো আবাদ অনিশ্চিত

প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মশিয়ার রহমান, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি

যশোরের কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলার ৬ ইউনিয়নের ২৭ বিলের ৫৬ হাজার বিঘা জমির বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া, দীর্ঘ ৫ মাস ধরে ওই ৬ ইউনিয়নের ৫৮ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে ২৭ বিল এলাকার হাজারও কৃষক সেচপাম্পে ঝুঁকে পড়ে। সেচ কমিটি বিল খুকশিয়ার ৮ ব্যান্ড স্লুইস গেটে ৩০টি বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প স্থাপন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, কবে বন্যার পানি নিষ্কাশন করে কৃষকরা বোরো আবাদ করবে তা নিয়ে বানভাসীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলার ২৭ বিলের ৬৮ গ্রামের বর্ষার অতিরিক্ত পানি বিল খুকশিয়ার ডায়ের খালের ৮ ব্যান্ড স্লুইস গেট দিয়ে হরি নদীতে নিষ্কাশন হয়। হরি নদী ও তার সংযোগ ডায়ের খালের ৮ ব্যান্ড স্লুইস গেট দীর্ঘদিন পলিতে ভরাটের কারণে কেশবপুর উপজেলার ২ ইউনিয়নের পাঁজিয়ার ১০ গ্রাম, সুফলাকাটির ১০ গ্রাম ও মনিরামপুরের ৪ ইউনিয়নের শ্যামকুড়ের ৩ গ্রাম, খানপুরের ৮ গ্রাম, দূর্বাডাঙ্গার ১৮ গ্রাম ও মনোহরপুরের ৫ গ্রামসহ ৫৮ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ দীর্ঘ ৫ মাস ধরে পানিবন্দি জীবন যাপন করছে। এলাকার জনগণ ৩ যুগ ধরে সেচ পাম্পের সাহায্যে পানি নিষ্কাশন করে ২৭ বিলে বোরো আবাদ করে আসছে। গত জুলাই ও আগস্টের ভারি বর্ষণের পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ হয়ে ২৭ বিলে স্থায়ী জলবদ্ধতা দেখা দেয়। জলাবদ্ধতা নিরসনে ৮ অক্টোবর ২৭ বিল বাঁচাও আন্দোলন কমিটি ৫ দফা দাবিতে পানি সম্পদ উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেয়। এ ছাড়া, ২৩ অক্টোবর পাঁজিয়া মাছ বাজার চত্বরে দুই উপজেলার হাজারও বানভাসীদের বিশাল সমাবেশ হয়। সমাবেশে পাঁজিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাস্টার মোকবুল হোসেন মুকুলকে আহবায়ক করে ৫১ সদস্যবিশিষ্ট পানি সেচ প্রকল্প কমিটি গঠন করা হয়। বাগডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আসিত মণ্ডল বলেন, হরি নদীর তলদেশ থেকে বিলগুলি নিচু হওয়ায় তার গ্রামটি সারা বছরই জলাবদ্ধ থাকে। সেচ পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন করলেও তার বিলে কোনো ফসল আবাদ হয় না। কাটাখালি বাজারের ৪ ব্যান্ড স্লুইস গেটে মেশিন লাগিয়ে যদি পানি নিষ্কাশন করা যায়, তাহলে তাদের বিলে বোরো আবাদ হবে। এবার বোরো আবাদ না হলে তাদের না খেয়ে মরতে হবে।

কানাইডাঙ্গা গ্রামের মাওলানা তাওহীদুল ইসলাম বলেন, বানভাসী জমির মালিকরা বিঘা প্রতি ৫০০ টাকা করে ও অবশিষ্ট টাকা ঘের মালিকরা দিয়ে এ সেচকার্য চালিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। গত সোমবার সেচ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন কমিটির আহ্বায়ক মাস্টার মোকবুল হোসেন মুকুল, এমএ হালিম, মেম্বার সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা তাওহিদুল ইসলাম, ওজিয়ার বিশ্বাসসহ নেতারা। সেচ পানি নিষ্কাশন কমিটির আহ্বায়ক সাবেক চেয়ারম্যান মাস্টার মোকবুল হোসেন মুকুল বলেন, হরি নদীসহ পলীতে বিল খুকশিয়ার ডায়ের খালের ৮ ব্যান্ড স্লুইস গেট ভরাট হয়ে যায়। স্বেচ্ছাশ্রমে জনগণ স্লুইস গেটের পলি অপসারণ করে সচল করলেও নদীর তলদেশ উঁচু থাকায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এ অবস্থায় সেচ পাম্পে ঝুঁকে পড়ে জনগণ। ২৭ বিলের পানি নিষ্কাশনে ৩ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বিল খুকশিয়ার ডায়ের খালের পাশে ৮ ব্যান্ড স্লুইস গেটে ৩০টি বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। মিটার স্থাপণে পাকা ঘর ও পাকা ড্রেন নির্মাণ কাজ সম্পন্নের পথে। অচিরেই বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প স্থাপণ করে পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম শুরু করা হবে। তিনি দাবি করেন, প্রশাসন যদি সেচ কাজে সহযোগিতা করে তাহলে পানি নিষ্কাশন আরো সহজ হবে। কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন শিকদার বলেন, কেশবপুরের জলাবদ্ধতা নিরসনে হরিহর, বুড়িভদ্রা, আপারভদ্রা ও হরি নদীর পলি স্কাভেটর দিয়ে অপসারণ কাজ চলমান। কাজ সম্পন্ন হলে পানিবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে।