মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লী ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে বেগুনের চাষ করছে প্রান্তিক কৃষকেরা। কম খরচে অধিক মুনাফা হওয়ায় বেগুন চাষে ঝুকছেন এই এলাকার চাষিরা। বর্তমান বাজারে বেগুনের দাম ও চাহিদা থাকায় খুশি বেগুন চাষিরা। এই ইউনিয়নের চরতিল্লি এলাকার সব চেয় বেশি বেগুনের চাষাবাদ করা হয়। তবে বর্তমান সময়ে সারাদেশের হাট বাজারে সবজির দাম আকাশছোঁয়া হলেও প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের চিত্র ভিন্ন। তারা সে অনুযায়ী ভালো দাম আসছেন না। কৃষকেরা প্রকারভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি করলেও ভোক্তা পর্যায়ে কেজিতে গুণতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০টাকা। এর মধ্যে পাইকারি ব্যবসায়ী, আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা মিলে দাম বাড়াচ্ছে দ্বিগুণ। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৯টি ইউনিয়নে সবজি উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫০ হেক্টর। এর মধ্যে শুধু তিল্লি ইউনিয়নেই এবার ৪১০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি আবাদ করা হয়েছে। ওই এলাকার কৃষকেরা সবচেয়ে বেশি বেগুন চাষ করে থাকে। স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার উৎপাদিত সবজি প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকেরা স্থানীয় পর্যায়ের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে এ সব সবজি বিক্রি করে থাকে। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা আড়তদারদের মাধ্যমে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। খুচরা ব্যবসায়ীরা আবার ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি করে। এতে কয়েকটি হাত ঘুরার ফলে সবজির দাম বৃদ্ধি পায়। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সবজিগুলো ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হয়। ক্রেতা আবুল মিয়া জানান, বর্তমান সবজির বাজার যেন আকাশ ছোয়া। শীতের সময় বাজারে প্রচুর সবজি থাকলেও কোন সবজি দাম কমেনি। সবজি কিনতে আমাদের হিমসিম খেতে হয়। বেগুন কিনতে হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি। কৃষক আবুল মিয়া জানান, বাজারে সবজির দাম বেশি হলে আমরা কি করবো। আমরা প্রতি কেজি বেগুন ৩০-৩৫ টাকার বেশি পাইনা। আমাদের হাত বদল হলেই বাজারে সবজির দাম দ্বিগুন হয়ে যাচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ী আক্কাজ আলী জানান, কৃষকের কাছ থেকে প্রথমে ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে বেগুন কিনলেও সেগুলো বাছাই করে পোকা ও খারাপ বেগুনগুলো আলাদা করে ফেলে দিতে হয়। এরপর সেগুলো খুচরা বিক্রেতাদের নিকট নিতে পরিবহন খরচসহ অনেক ধরনের খরচ হয়। এরপর আবার খুচরা ব্যবসায়ীরা সেগুলো চুড়ান্ত ভোক্তাদের নিকট পৌছাতে তাদেরও খরচ হয়। তাই কয়েকটি হাত বদল হতে গিয়ে বেগুলের দাম বেড়ে যায়। স্থানীয় আড়ত এর মালিক সুমন বান্দু বলেন, এ বাজারে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার মণ বেগুন কেনাবেচা হয়। পরিবহন ও অন্যান্য খরচ বাদে আমরা সীমিত মুনাফায় বিক্রি করে থাকি। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুশান্ত সরকার বলেন, সাটুরিয়ায় তিল্লি ইউনিয়নে ৪১০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা হয়। এর মধ্যে ৩৪০ হেক্টর জমিতে শুধু বেগুনের আবাদ করা হয়েছে। সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি বেগুন উৎপাদন করা হয়। উপজেলার মোট ১০ হাজার ২৬০ হেক্টর কৃষি জমির মধ্যে সবজির আবাদ হয় ১হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ৪৩১ হেক্টর জমিতে বেগুনের আবাদ করা করা। তবে উপজেলায় মোট ৪৩১ হেক্টর জমির মাঝে শুধু তিল্লী ইউনিয়নে ৩৪০ হেক্টর জমিতে বেগুনের আবাদ করা হয়। বেগুন চাষাবাদে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সর্বাক্ষণিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দেয়া হয়, কৃষক তা গ্রহণ করে লাভবান হচ্ছেন। আগামীতে চাষাবাদ আরো বাড়বে বলে জানান এই কর্মকর্তা।