ধানের চেয়ে ভুট্টা উৎপাদনের খরচ কম, কিন্তু লাভ বেশি পাওয়ায় শেরপুরের নকলা উপজেলার কৃষকরা দিন দিন ধান ছেড়ে ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন। নামমাত্র শ্রমে, সামান্য পরিমাণ সার, ২/৩ বার হালকা সেচ ও অল্প খরচে অধিক লাভ পাওয়ায় শস্য ভান্ডার খ্যাত এ উপজেলার সব এলাকার কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। এ ছাড়া বাড়ির অঙ্গিনায় পতিত থাকা জমিতে ভুট্টা চাষ করে ও ভুট্টা খেতে স্বল্পকালীন শাক-সবজি চাষ করে বাড়তি আয়ের পথ খোঁজ পেয়েছেন তারা। এমন এক তরুণ সৌখিন কৃষক বানেশ্বরদী গ্রামের খন্দকার উজ্জল মিয়া। তিনি তার বাড়ির অঙ্গিনায় পতিত থাকা প্রায় ১৫ শতক জমিতে ভুট্টা চাষ করে সেখানে লাল শাক ও বাথুয়া শাক বপন করেছেন। উজ্জল জানান, এই জমিতে এককেজি ভুট্টা, ২৫০ গ্রাম লল শাকের বীজ ও ১২৫ গ্রাম বাথুয়া শাকের বীজ বপন করেছেন। জমি তৈরি, বীজ ক্রয়, শ্রমিক মজুরিসহ অন্যান্য নব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ২,২০০ টাকা। এই জমির শাক দিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটিয়েও কমপক্ষে ২ হাজার টাকার শাক বিক্রি করতে পারবেন। এতে তার মোট ব্যয়ের প্রায় সব টাকা শাক থেকেই উঠে আসবে বলে তিনি আশা করছেন। সামান্য এই জমিতে ভুট্টা উৎপাদন হবে ৮ থেকে ৯ মণ। আর উৎপাদিত ভুট্টার আয় পুরোটাই তার লাভ থাকবে। কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে নকলায় ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২,১২৭ হেক্টর। গত সোমবার পর্যন্ত উপজেলায় ২,২০১ হেক্টর জমিতে ভুট্টা বপনের কাজ শেষ হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অনেক কৃষক এখনো ভুট্টা বপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জন অনেক বেশি হবে বলে মনে করছেন কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা। গত বছর ভুট্টার বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভালো দাম পাওায় কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। উপজেলার প্রায় সব বেলে ও বেলে দো-আঁশ মাটির জমিতে এবং বাড়ির পাশের পতিত জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। আর ভুট্টা খেতে শোভা পাচ্ছে লাল-সবুজের শাক-সবজি। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ভুট্টা আবাদের অর্জন হয়েছিল ১,৬৬৫ হেক্টর। ২০২৩-২৪ অর্থ বছর তা বেড়ে অর্জন হয়েছে ২,২৩০ হেক্টর, যদিও লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২,১২৭ হেক্টর। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ২,১২৭ হেক্টর; তবে এবারো লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে ৭৪ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ বেড়ে অর্জন হয়েছে ২,২০১ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে অর্জন বাড়ার কারণ হিসেবে জানা গেছে, সরকারি কৃষি প্রণোদনা বৃদ্ধি ও কৃষকের আগ্রহ। ভূরদী খন্দকার পাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছায়েদুল হক জানান, তারা চলতি মৌসুমে ভুট্টা বপনের কাজ শেষ করেছেন। তারা সবাই অধিক লাভের তথা বাড়তি আয়ের আশায় ভুট্টা খেতে স্বল্পকালীন শাক-সবজি চাষ করেছেন। এতে বাড়তি আয়ের পথ খোঁজ পেয়েছেন কৃষকরা। দিন দিন এমন লাভজনক সাথী ফসলের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা, এমনটাই জানান তিনি। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাগর চন্দ্র দে ও ফারিহা ইয়াসমিন জানান, উপজেলায় এবছর পাইওনিয়ার, আল আসকা, সুপার সাইন, প্যাসিফিক, কেএমএইচবি ও এলিট জাতের ভুট্টা বেশি চাষ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলার ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিপুল সংখ্যক কৃষকের মাঝে সরকারি কৃষি প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। প্রতি কৃষককে একবিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করার জন্য ২ কেজি করে ভুট্টা বীজ, ২০ কেজি করে ডাই এ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ও ১০ কেজি করে মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩৩ শতক করে জমিতে বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী প্লটে ভুট্টা আবাদ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী জানান, উপজেলার চন্দ্রকোনা, চরঅষ্টধর, টালকী, পাঠাকাটা, বানেশ্বরদী ও গৌড়দ্বার ইউনিয়নসহ পৌরসভায় ভুট্টার আবাদ বেশি হয়েছে। তবে উরফা, নকলা ও গনপদ্দী ইউনিয়নসহ উপজেলার প্রায় সব এলাকাতে কমবেশি ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, ভুট্টা চাষের উপযোগী সব জমিকে ভুট্টা আবাদের আওতায় এনে জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা ও কৃষিপণ্য উৎপাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভুট্টা চাষ করতে কৃষকদের সর্বোচ্চ পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, দেয়া হয়েছে প্রনোদনা।