হাতে খুন্তি আর ব্যাগ নিয়ে ইঁদুরের বাসায় (গর্ত) হানা দিতে সদ্য ফসল ওঠা আমন খেতের অভিমুখে কয়েকজন শিশু। উদ্দেশে ইঁদুরের জমানো ভাণ্ডারে হানা। যুদ্ধ করে হলেও ইঁদুরের গচ্ছিত ভাণ্ডার চাই। তাই খুঁজতে থাকেন ইঁদুরের গর্ত। যে গর্তে খাদ্য মজুদ করে রেখেছে ইঁদুরের দল। ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে তিলের খাজা খাওয়ার লোভে সে-ই ইঁদুরের গোলায় হানা দিচ্ছে পাড়ার দুরন্ত শিশুরা।
তাই আলতো হাতে খুন্তি চালিয়ে গর্ত খুঁড়ে তাদের ভাণ্ডারে জমানো ধান ছিনিয়ে নিচ্ছেন গ্রাম-গঞ্জের কচিকাচারা। উদ্দেশ্য ভাণ্ডারে ধান গচ্ছিত রয়েছে। ইঁদুরের সঞ্চিত সেই ভাণ্ডারের পুরোটাই চাই। এ ধানের চালে পিঠা হবে, নয় তো বাজারে বিক্রি, আর সেই টাকা দিয়েই নতুন জামা। অগ্রহায়ণের ঘ্রাণে নবান্নের উৎসব না থাকলেও শিশুদের ধান কুড়ানোর ব্যস্ততা যেন আরেক উৎসবে পরিণত হয়েছে। এমনই চিত্র দেখা গেছে বিভিন্ন ধানখেতে। তাদের মধ্যে একজন জানায়, ইঁদুরের গর্তে হাত ঢুকিয়ে ধান সংগ্রহ করতে একটু ভয় লাগে। মাটি খুড়তে গিয়ে মাঝে মাঝে ইঁদুর বের হয়। তারপরও শখের বসে বন্ধুরা মিলে ধান কুড়াচ্ছি। পড়ে থাকা ধানের শীষ কুড়ানোর চেয়ে ইঁদুরের গর্তে ধান বেশি থাকে, সেই ধান কুড়াতে খুব আনন্দ হয়।
বগুড়া সদরের শিবগঞ্জ উপজেলার জামুরহাট বেলভূজা গ্রামে ক্ষেতে ধান কুড়াতে ব্যস্ত কয়েকজন শিশু। তাদের সারা গায়ে লেগে আছে কাদা মাটির দাগ। দীর্ঘক্ষণ ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান উদ্ধারে চেষ্টা করে তারা। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ থেকে কৃষকরা ধান তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তারা ইঁদুরের গর্তে হাত ঢুকিয়ে জমানো ধান ব্যাগে ভরছে। এ ছাড়া জমিতে পড়ে থাকা ধানও কুড়িয়ে ব্যাগে ভরে নিচ্ছে শিশুরা। কুড়িয়ে পাওয়া সেই ধান ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে তারা। আর ওই টাকা দিয়ে মেটাচ্ছে তাদের ছোট ছোট চাহিদা। এ সব ধান কুড়ানি শিশুরা প্রতিদিন দলবেধে ছুটে যায় ফসলের মাঠগুলোতে। শিশুরা ১০ থেকে ১৫ কেজির মতো ধানের শীষ কুড়িয়ে থাকে। হাফিজার নামে এক কৃষক বলেন, খেত থেকে ইঁদুর ধানের শীষ কেটে নিয়ে আপদকালীন খাদ্য হিসেবে গর্তে মজুত রাখে। আর ওই সব শিশু-কিশোর সেই গর্ত খুঁড়ে ইঁদুরের খাদ্য বের করে। তবে এতে ঝুঁকিও রয়েছে। গর্তে বিষধর সাপ থাকতে পারে। তবে এ ধান কাটার মৌসুমকে ঘিরে এ কাজের সঙ্গে অভাবী পরিবারের লোকজনও যুক্ত হয়েছে। মাঠে ধান কুড়াতে আসা শিশুরা বলে, আমরা ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ধান সংগ্রহ করে তা বিক্রি করি। ওই টাকা দিয়ে পোশাক কিনবো। ধান কাটার পর জমিতে পড়ে থাকা ধানের শীষ ও ইঁদুরের গর্তের ধান সংগ্রহ করি। সারাদিন চার-পাঁচ কেজি ধান কুড়াই। সেই ধান বিক্রি করে নিজের শখ পূরণ করি।
