পাবনায় নিরাপদ সবজি চাষে জৈব সার ব্যবহারে সফলতা পেয়েছেন কৃষকেরা। জৈব সার ব্যবহারে উৎপাদন খরচও কম। ফলে এ অঞ্চলের কৃষকেরা রাসায়নিকমুক্ত সবজি আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। স্থানীয়ভাবে এ বছর জেলায় ১৪ হাজার ৩১০ টন জৈব সার উৎপাদন হয়েছে। এ থেকে সবজি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ২৫ হাজার টন। এবার শতভাগ বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের প্রত্যাশা করেছেন কৃষি বিভাগ। পাবনা কৃষি বিভাগের একটি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে জেলায় ৫৩ হাজার ৪০ জন কৃষককে জৈব সার উৎপাদন, কীটনাশক ছাড়া পোকা দমনে ফাঁদ তৈরি এবং এর সঠিক ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাবনা সদর উপজেলায় ১৪ হাজার ৪১০, আটঘরিয়ায় ৬ হাজার ৯০০, ঈশ্বরদীতে ৫ হাজার ৮০৫, চাটমোহরে ৬ হাজার ৫৬০, ভাঙ্গুড়ায় ৩ হাজার ৪২৫, ফরিদপুরে ৩ হাজার ২৯০, বেড়ায় ৬ হাজার ২৮০, সাঁথিয়ায় ১ হাজার ৮৯০ ও সুজানগর উপজেলায় ৪ হাজার ৪৮০ জন কৃষক রয়েছেন। ভার্মি, ট্রাইকো, কুইক কমপোস্ট ও কমপোস্টসহ জৈব সার উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৩১০ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ২৫ হাজার মেট্রিক টন। অনেক আবাদ বাকি আছে। তা শুরু হলে এ জৈব সার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে জানায় কৃষি বিভাগ। পাবনা সদর, আটঘরিয়া ও ঈশ্বরদী উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় উল্লেখযোগ্য হারে শীতকালীন সবজি আবাদ হয়। বিশেষ করে শিম উৎপাদনে মুলাডুলী গ্রামের নাম ‘শিম সাগর’ বলে পরিচিতি পেয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শিমসহ বিভিন্ন সবজি আবাদে চাষিরা জৈব সার ব্যবহার করছেন। কৃষকরা জানান, রাসায়নিক সার ব্যবহারে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মাটির ঊর্বরতা কমে যায় এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে জৈব সার ব্যবহার শুরু করছেন। বর্তমানে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ভার্মি কম্পোস্টসহ নানা ধরনের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির জৈব সার ব্যবহার করছেন তারা। ফলে তাদের উৎপাদন খরচ অনেক কমে গেছে। জৈব সার ব্যবহারে সফল হওয়ায় এখন রাসায়নিকমুক্ত সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষকরা। পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া গ্রামের কৃষক শামসুল আলম জানান, তিনি এবার সবজি আবাদে জৈব সার এবং খেতের পোকা দমনের জন্য কীটনাশকের পরিবর্তে ফাঁদসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।
এতে আবাদ খরচ অনেক কমছে। নিরাপদ সবজি চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে লাভবান হচ্ছি। আটঘরিয়া উপজেলার মাঝগ্রামের সবজি চাষি আনারুল ইসলাম জানান, আধুনিক পদ্ধতিতে ফলন বাড়ানোর জন্য জমিতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হত। ফলন বাড়াতে এ সব ব্যবহার করতেন। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারে ফসলের জমি এবং মানুষের ব্যপক ক্ষতি হয় জানতে পেরে তিনি এখন জৈব সার ব্যবহার করছেন। এতে তার উৎপাদন খচরও কম হচ্ছে অন্যদিকে সবজির আবাদও ভালো হচ্ছে। ঈশ্বরদীর মুলাডুলি গ্রামের সবজি চাষি আব্দুস সলাম জানান, তিনি রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করছেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে জৈব সার তৈরি করে জমিতে ব্যবহার করছি। এতে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের পাশাপাশি আবাদ খরচ কম হচ্ছে। জানা গেছে, গত এক দশকে পাবনা জেলায় মাত্রাতিরিক্ত ভাবে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার বেড়ে যায়। এতে উৎপাদিত সবজি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা জানালে রাসায়নিকের ব্যবহার কমিয়ে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ দেয় কৃষি বিভাগ। নিরাপদ সবজি উৎপাদনে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সহযোগিতায় পরীক্ষামূলক প্রকল্পে সফল হওয়ায় এখন রাসায়নিকমুক্ত সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষকেরা।
এ ব্যাপারে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন বলেন, আগে আমাদের লক্ষ্য ছিল খাদ্য নিশ্চিত করা। এখন আমাদের লক্ষ্য নিরাপদ খাদ্য। সেখান থেকেই নিরাপদ সবজি উৎপাদনে রাসায়নিক ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধে কাজ করে যাচ্ছি। জৈব সার ব্যবহারে উৎপাদন খরচ অনেক কম এবং ফলনও অনেক ভাল। ধীরে ধীরে কৃষকদের জৈব সার ব্যবহারে আগ্রহ বাড়ছে। প্রতিনিয়ত কৃষকদের সাথে এ নিয়ে কাজ করছি, প্রশিক্ষণের মধ্যদিয়ে নিরাপদ সবজি ও রবিশস্য আবাদে তাদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আশা করছি খুব শিগগির পাবনা জেলা শতভাগ নিরাপদ সবজি আবাদের আওতায় আসবে।