প্রিপেইড মিটারে ভোগান্তি গ্রাহকদের
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নওগাঁ, প্রতিনিধি
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) নওগাঁর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ থেকে বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হচ্ছে। প্রিপেইড মিটারে টাকা রিচার্জ করা হলে ভৌতিক ভাবে টাকা কেটে নেয়া হচ্ছে। এতে বাড়তি টাকা খরচ হওয়ায় গ্রাহকদের ভোগান্তী বাড়ছে। আর তাদের ভোগান্তী থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধে রাস্তায় নেমেছে নওগাঁবাসী। জনগণের স্বার্থ রক্ষায় গত বেলা ১১টায় নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে বিদ্যুৎ গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা কমিটির ব্যানারে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে তারা। এ সময় সাংস্কৃতিক ব্যক্তি উৎপল সাহার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পাটির নওগাঁর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম খোকন, বিদ্যুৎ গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা কমিটির সমন্বয়ক আলীমুর রেজা রানা, শিক্ষক জাহিদ রব্বানি, সাবেক কাউন্সিলর এসএম রশিদুল আলম সাজু, বিন আলী পিন্টু, দেওয়ান কামরুল আহসান শাহীন, শহিদুল ইসলাম বাবলু, ওবাইদুর রহমান, মাহবুবুল আলম আলোসহ অন্যরা। মানববন্ধনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি এবং ভুক্তভোগী গ্রাহকসহ সুধিজনরা উপস্থিত ছিলেন।
নওগাঁ পৌরসভা এলাকায় গত একমাস থেকে বাসাবাড়িতে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ করছে নেসকো। কিন্তু এই মিটার স্থাপন করতে গিয়ে কৌশল অবলম্বন করে গ্রাহকদের বাসায় মিটারটি লাগিয়ে দিচ্ছে নেসকোর পরিচয় দেয়া লোকজন। গ্রাহকদের সঙ্গে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে তাদের। এদিকে মিটার লাগানো পর বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। মিটারে টাকা রিচার্জ করা হলে ভৌতিক ভাবে টাকা কেটে নিচ্ছে। যার কারণে প্রিপেইড এ মিটার স্থাপন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন সচেতনমহল। নওগাঁ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসীন্দা গ্রাহক মিন্টু অভিযোগ করে বলেন, এক সপ্তাহ আগে বিকালে নেসকোর অফিস থেকে লোকজন এসে প্রিপেইড মিটার লাগিয়ে দেয়। ওইদিনই তারা ৫০০ টাকা রিচার্জ করে দিয়েছে বলে জানায়। কিন্তু মিটারে বাস্তবে ২০ টাকা দেখা যায়। পরদিন সকালে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়। পরে মিটারে দেখা যায় টাকা নাই। আবারো হাওলাদ করে মিটারে ৫০০ টাকা রিচার্জ করা হলে সঙ্গে সঙ্গে ১৬০ টাকা কেটে নেয়। অথচ আর ১৫০ টাকা যোগ করা হলে আমার সারা মাসের বিল হয়ে যেতো। কারণ ডিজিটাল মিটারে আমার প্রতিমাসে বাসার বিদ্যুৎবিল আসে ৩০০-৩৫০ টাকা। আমার কাছে প্রিপেইড মিটার সুবিধাজনক মনে হয়নি। বিদ্যুৎ গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা কমিটির সমন্বয়ক আলীমুর রেজা রানা বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় জনগণকে উপেক্ষা করে প্রিপেইড মিটার বসানোর উদ্যোগ নেয়। মিটারে প্রচুর কারচুপি কারণে নেসকোর দুর্নীতি ও ভৌতিক বিল দিচ্ছে। যা লুটপাট করতে দিবে না নওগাঁবাসী। বিদ্যুৎ সবার জন্য। কিন্তু এই প্রিপেইড মিটার যার টাকা আছে তার। অথচ মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়ে গেছে। এতে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই অবিলম্বে বাসা-বাড়ি সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রিপেইড মিটার লাগানো বন্ধ করতে হবে। বন্ধ না করলে কঠোর আন্দোলনের পাশাপাশি নেসকোর অফিস ঘেরাও করা হবে। সাংস্কৃতিক ব্যক্তি উৎপল সাহা বলেন, বাড়িতে ঢুকে জোর করে নেসকোর লোকজন মিটার পরির্বতন করছে। তারা ইচ্ছেমতো বিল করে পকেট কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের অফিসের ঘুষ দুর্নীতি তদন্ত করতে হবে এবং শাস্তি দিতে হবে। তারা ঠিক মতো সার্ভিস দিতে পারে না। মানুষ ওই প্রিপেইড মিটার লাগাতে চাইনা। নেসকোর জুলুম শুরু হয়েছে তা প্রতিরোধ করতে হবে। যে মিটারটি লাগানো হয়েছে এরই মধ্যে তা পরিবর্তন করে আগেরটা লাগিয়ে দিতে হবে। কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের দাবি আদায় করা হবে।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) নওগাঁর বিক্রয় ও বিতরণ দক্ষিণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তানজিমুল হক বলেন, জেলায় উত্তর ও দক্ষিণ বিভাগের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। কিন্তু প্রিপেইড মিটার আসছে তারও অধিক। এরই মধ্যে তিন ফেজের মিটার লাগানো শেষ হয়েছ। দুই ফেজের মিটার লাগানোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তিনি বলেন- গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে সরকারের পক্ষ থেকে প্রিপেইড মিটার লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে করে গ্রাহকরা ভোগান্তি বা হয়রানি যেন না হয়। এখানে ব্যক্তি স্বার্থ বা অনিয়মের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।