অসময়ে তরমুজ চাষ করে লাভবান কৃষক
প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আব্বাস আলী, নওগাঁ
খাদ্যশস্যে উদ্বৃত্ত উত্তরের জেলা নওগাঁ ধান-চাল ও সবজি এলাকা হিসেবে পরিচিত। তবে বরেন্দ্রের জেলায় এখন বিভিন্ন ফলের চাষাবাদ হচ্ছে। এতে ফলের আমদানি নির্ভরতা যেমন কমছে তেমনি উদ্যোক্তা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে কর্মসংস্থান। কৃষি অফিসের পরামর্শে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন ফলের চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছে কৃষক ও উদ্যোক্তারা। উত্তরের এ বরেন্দ্র জেলার মাটি কিছুটা অমøীয় ও উর্বর ভূমি। ফলে এ মাটিতে প্রতি বছরই আম, মাল্টা, কমলা, ড্রাগন ও তরমুজসহ অন্যান্য ফলের চাষ হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে- জেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। যা থেকে এক হাজার মেট্রিক টন উৎপাদনের আশা। যার বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা আব্দুর রউফ। তিনি এলাকায় স্মার্ট কৃষক নামেও পরিচিত। অন্য কৃষকরা সচরাচর যেসব ফল ও ফসল চাষাবাদ করেন তিনি তাদের থেকে কিছুটা ভিন্ন। গতানুগতিক চাষাবাদ না করে ভিন্ন পদ্ধতিতে আবাদ করে থাকেন। নিজেই কোকোপিটে চারা উৎপাদন করেন। এতে করে সুষ্ঠু ও সতেজ চারা উৎপাদন হওয়ায় সহজেই রোপন করতে পারেন। ভিন্ন ফলস চাষাবাদ করায় ভালো দাম পেয়ে লাভবান হন। এমনকি বিভিন্ন জেলায় বিশেষ করে পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলায় গিয়ে চাষাবাদ পদ্ধতি দেখে আসেন। কিভাবে সেসব জেলায় কৃষকরা কোন পদ্ধতিতে ফসল চাষ করছে। ভিন্ন পদ্ধতিতে নতুন ফসল চাষ করায় ক্ষেত দেখতে ও পরামর্শ নিতে আসেন আশপাশের কৃষকরা। কৃষক সাবুদ রানা বলেন, বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি আমরা চাষাবাদ করে থাকি। পাশেই কালো জাতের তরমুজ চাষ করেছে আব্দুর রউফ ভাই। তার হাত ধরেই এ এলাকায় নতুন নতুন জাতের ফল ও ফসলের আগমন হয়ে থাকে। পরবর্তিতে তার দেখাদেখি আমরাও চাষ করে থাকি। কিভাবে চাষাবাদ করতে হয় সে বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে থাকি। এতে করে আমরাও লাভবান হচ্ছি। তরমুজখেতে নিয়মিত কাজ করেন কৃষক স্বপন হোসেন।
তিনি বলেন, গত দুই মাস থেকে তরমুজ খেতে দিনে ৫০০ টাকা মজুরিতে কাজ করছি। জমিতে কখন কি দিতে হবে সে অনুযায়ী কাজ করে থাকি। উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা আব্দুর রউফ বলেন- দুই বছর থেকে এক বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে বারোমাসি তরমুজ চাষ করছি।
এ ফসলে বীজ, সার, মালচিং পেপার, শ্রমিক, হালচাষসহ খরচ পড়েছে অন্তত ৩০-৩২ হাজার টাকা। তরমুজ অল্প সময়ের ফসল এ জন্য এটা বেছে নিয়েছি। চারা রোপন থেকে শুরু করে ৭০ দিনের মধ্যে উঠানো যায়। কৃষি অফিস থেকে প্রদর্শনি হিসেবে দিয়েছে। জমিতে এক হাজার পিস গাছ লাগানো আছে। প্রতিটি গাছে প্রায় চারকেজি তরমুজ হয়েছে। বাজারে ৪০ টাকা কেজি। সে হিসেবে প্রায় দেড় লাখ টাকার বিক্রি হয়েছে। খরচ বাদে লাভ হয়েছে অন্তত এক লাখ ২০ হাজার টাকা। তিনি বলেন- একই জমিতে মিষ্টি কুমড়া রোপন করা হবে। এতে মাঁচা তৈরিতে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে না। অল্প খরচেই আবাদ হয়ে যাবে। বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাবাব ফারহান বলেন- এ উপজেলায় মৌসুমি এবং বারোমাসি তরমুজ চাষ বাড়ছে। অসময়ে কালো জাতের তরমুজ চাষ এ উপজেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ফলে অমৌসুমে দাম তুলনামুলক বেশি পেয়ে কৃষকরা লাভবান হয়ে থাকে। ১৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৫০০ মেট্রিক টন উৎপাদনের আশা। কিছু তরুণ উদ্যোক্তা মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছে। এতে করে বরি মৌসুমে পানির যে ঘাটতি থাকে তা পূরণ করে তরমুজ আবাদ করা সহজ হচ্ছে। আগামীতে তরমুজ চাষ আরো বাড়বে বলে আবাশাবাদী। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। আবার পুষ্টিগুনের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে বিশেষ করে পানি শূন্যতা দুর করে। ইলেকট্রোলাইট, সুগার ও ভিটামিন জাতীয় খনিজ উপাদান রয়েছে।