লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার জগতবেড় ইউনিয়নের পশ্চিম জগতবেড় গ্রামের জীবন সংগ্রামের এক অদম্য মেধাবী যুবক মামুন ইসলাম (২৫)। তার মা ছকিনা খাতুন গৃহিণী ও বাবা পানাউল্লাহ একজন বর্গা চাষি। তাদের বসতবাড়ি ছাড়া অন্য কোন জায়গা-জমি নেই। সংসারে অভাব অনটন ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। চার ভাই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় মামুন। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট ভাই মারুফ ইসলাম চলতি বছর উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে। মামুন ২০১৪ সালে স্থানীয় কচুয়ার পাড় উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় ৪.৬৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এরপর পাটগ্রাম আদর্শ ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০১৬ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ব্যবসা শাখা থেকে ৪.২৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। টাকার অভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে পারেননি। এরপর রংপুরের কারমাইকেল কলেজে ফিন্যান্সে ভর্তি হন। সংসারের অভাবের কারণে সেখানে লেখাপড়া শেষ করতে পারেনি। এক বছর পরে ওই কলেজের ভর্তি বাতিল করে নিজ এলাকায় পাটগ্রাম সরকারি কলেজে বাংলায় অনার্সে ভর্তি হন। সেখান থেকে অনার্স পাশ করেন। সংসারের হাল ধরতে অনার্স অধ্যয়নরত অবস্থায় চাকরি নেন গ্রাম পুলিশের (চৌকিদার)। গ্রাম পুলিশের চাকরির পাশাপাশি পড়ালেখা ও বাবার বর্গা জমিতে কাজে সহযোগিতা করেন। এখন সে রংপুরের কারমাইকেল কলেজে বাংলায় মাস্টার্সে অধ্যায়নরত। মামুন ইসলাম বলেন, অনার্স চতুর্থ বর্ষে অধ্যায়নরত অবস্থায় আমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জানতে পারি গ্রামপুলিশের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আমি আবেদন করি, পরীক্ষা দেই। ওই পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে পাশ করি। তৎকালীন পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুর রহমান স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করে এই চাকরি হলে করবো কিনা? আমি স্যারকে জানাই চাকরি হলে অবশ্যই করবো। পরে চাকরি হয়েছে। আর আমি সব পেশা ও কাজকে সম্মান-শ্রদ্ধা করি। কোনো কাজকে ছোট করে দেখি না। আমি সব মানুষকে ভালোবাসি শ্রদ্ধা করি। তারাও আমাকে ভালবাসে আপন করে নেয়। সারা জীবন মানুষের সেবা করে যেতে চাই। মামুনের বাবা পানাউল্লাহ বলেন, আমার অভাবী সংসারে ছেলের গ্রাম পুলিশের চাকরি হয়েছে এতে আমি অনেক খুশি। আল্লাহর রহমতে তার চাকরি দিয়ে সংসার ভালোই চলছে। জগতবেড় ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গ্রামপুলিশ মামুন ইসলাম খুবই মেধাবী। সে সৎ ও নিষ্ঠাবান এ জন্য আমরা সবাই তাকে খুবই পছন্দ করি।