টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ১৫৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় ১৩৫ জনের মৃত্যু এবং ১৩৯ জন আহত হয়। নিহতদের মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৮ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৮ জন, মার্চ মাসে ২১, এপ্রিল মাসে ১৩ জন, মে মাসে ৬ জন, জুন মাসে ১৯ জন, জুলাই মাসে ৮ জন, আগস্ট মাসে ৩ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ১০ জন, অক্টোবর মাসে ১৩ জন, নভেম্বর মাসে ৬ জন ও ডিসেম্বরে ১০ জন। এসব দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৬ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১২ জন, মার্চ মাসে ২২ জন, এপ্রিল মাসে ২৩ জন, মে মাসে ১৮ জন, জুন মাসে ১২ জন, জুলাই মাসে ১০ জন, আগস্ট মাসে ৩ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ১০ জন, অক্টোবর মাসে ১৩ জন, নভেম্বর মাসে ১ জন এবং ডিসেম্বর ৯ জন অসহায় জীবন-যাপন করছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকটি কারণের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. মো. তুহিন তালুকদার বলেন, বেশি ট্রিপের আশায় চালকরা পাল্টাপাল্টি যানবাহন চালানো, বেপরোয়া গতি, তিন চাকার যানবাহন মহাসড়কের দাপিয়ে চলা, টহল পুলিশ এবং ট্রাফিক পুলিশের সঠিক তদারকি না থাকা, সিএনজি, অটো ও ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়া, এদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোনো প্রকার নজরদারি না থাকা ও তিন চাকার যানবাহন চালকদের কোন প্রকার প্রশিক্ষণ, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা, চালকদের নিরাপদ সড়ক আইন সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকা দুর্ঘটনার কারণ বলে মনে করেন তিনি।
এসব কারণগুলোর প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজরদারি রাখলে দুর্ঘটনা অবশ্যই কমবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরো বলেন অভিভাবকদের অসচেতনায় তরুণদের দ্রুতগতির মোটরসাইকেল কিনে দেয়ায় বর্তমানে তরুণরাই বেশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এছাড়াও যানবাহন চালকরা মোবাইল ব্যবহারে সতর্ক না থাকাকেও দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। কয়েকজন বাস চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চালকের ট্রিপের ওপর নির্ভর করে মালিকের কাছ থেকে তাদের পারিশ্রমিক নিতে হয়।
মাসিক বেতনভুক্ত কর্মচারী না থাকায় বেশি ট্রিপ দিতে গিয়ে মহাসড়কে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনায় কবলিত হয়। টাঙ্গাইলের নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মুহা. সাজ্জাদ খোশনবীশ বলেন, বহু মানুষ সড়কে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করছে। দুর্ঘটনার পর আর কেউ ভুক্তভোগি পরিবারের খবর রাখে না। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অনেক পরিবারের ভাগ্যের চাকা একেবারেই থেমে গেছে। তাই সরকারের কাছে দাবি সড়কের আইন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীকে আরো সচেতন হতে। এছাড়াও দুর্ঘটনা কমাতে টহল পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করছে কি না এ বিষয়ে কঠিন নজরদারি প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন- যে হারে গ্রামগঞ্জে মটর সাইকেলের সংখ্যা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনাও বাড়ছে। শহরের অলিগুলি দিয়ে তিন চাকার গাড়িগুলো (সিএনজি, অটো ও ব্যাটারি চালিত রিক্সা বাড়ছে। এদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোনো প্রকার নজরদারি নেই বলেই চলে। এই তিন চাক্কার গাড়ি চালকরা তাদের নেই কোন প্রশিক্ষণ, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং নিরাপদ সড়ক আইন সর্ম্পকে কোন ধারণা। এসব কারণগুলো সমাধান করা গেলে অন্তত দুর্ঘটনা কিছুটা হলেও কমবে বলে তিনি মনে করেন।
টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাড. জাফর আহমেদ বলেন, যানবাহন চালকদের প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। চালাকদের সড়কে নামার সঙ্গে সঙ্গে সড়ক আইন সর্ম্পকে সচেতন করা। এছাড়াও ছোট বড় সব যানবাহনের চালকদের ডাটাবেজ তৈরি করলে চালকরা নিজ নিজ উদ্যোগে দক্ষতার সঙ্গে কাগজপত্র তৈরি করে মাঠে নামতো বলে তিনি মনে করেন। এতে করে দক্ষ চালকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেত। দুর্ঘটনাও কমে যেত। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন (বিআরটিএ) টাঙ্গাইলের সহকারী পরিচালক শেখ মাহতাব উদ্দিন জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছরই আহত এবং নিহতদের ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকি। এছাড়াও ২০২৪ সালে ২২ জন নিহত এবং আহতরা আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন করেছেন।
এর মধ্যে নিহত রয়েছে ১৮ জন ও আহত রয়েছে ৪ জন। এদেরকে যাচাই-বাছাই করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রাকিবুল হাসান রাসেল বলেন, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা, মহাসড়কে স্বল্প গতির যানবাহন চলাচল, বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালকদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন করা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার তদারকি মহাসড়কে চাঁদাবাজিসহ দুর্ঘটনার কারণগুলো যথাযথ নজরদারিসহ সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করছি।