ঢাকা ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বন্যার পানি না সরায় কলেজে পাঠদান ব্যাহত

বন্যার পানি না সরায় কলেজে পাঠদান ব্যাহত

যশোরের কেশবপুরের দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী হিজলডাঙা শহীদ ফ্লাইট লে. মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজ দীর্ঘ ৫ মাস ধরে জলাবদ্ধ থাকায় এর শ্রেণিকক্ষসহ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বন্যায় কৃষি ডিপ্লোমা ভবন সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। কলেজের দোতলা একাডেমিক ভবনটি আজও পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এরপরও একটি শ্রেণিকক্ষের টিন মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কলেজটিতে কৃষি ডিপ্লোমা ও বিএমটি শাখা চালু থাকলেও এর শিক্ষকরা দীর্ঘ ২০ বছরেও এমপিওভূক্ত না হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এ অবস্থায় কলেজের ৬ শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষাক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কলেজের অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে কেশবপুরের প্রয়াত সংসদ সদস্য মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনের ছেলে প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত শহীদ ফ্লাইট লে. মাসুদের স্মৃতির উদ্দেশে জন্মভূমি হিজলডাঙ্গা গ্রামের স্থাবর-অস্থাবর ৫৫ বিঘা জমির ওপর একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানের নাম দেন, হিজলডাঙ্গা শহীদ ফ্লাইট লে. মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজ। ১৯৯৭ সালের ৭ মার্চ তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া হিজলডাঙায় গিয়ে এ কলেজ ও হাসপাতাল উদ্বোধন করেন। ১৮৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কলেজটি যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠালগ্নে মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনের সদিচ্ছায় কলেজের ৫০০ থেকে ৬০০ শিক্ষার্থীকে তিন বেলা ফ্রি খাওয়ানোর ব্যবস্থা ছিল।

শিক্ষার্থীদের বই, স্কুল ড্রেস ফ্রি দেয়া হতো। কলেজটি যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার মোহনায় স্থাপিত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা এ কলেজে লেখাপড়া করতে আসতো বলে এর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ছিল কলেজটির স্বর্ণযুগ। এরপর মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনকে সরিয়ে কলেজের সভাপতি হন কেশবপুর সাবেক সংসদ, সাবেক হুইপ শেখ আবদুল ওহাব। এরপর থেকে কলেজটি ধ্বংস হতে থাকে। কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রি, কৃষি ডিপ্লোমা ও বিএমটি শাখা চালু রয়েছে। বর্তমান এর শিক্ষার্থী রয়েছে ৬৮০ জন। কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ দাস, মুন্নী খাতুন জানায়, তাদের কলেজের শ্রেণিকক্ষ জরাজীর্ণ, পর্যাপ্ত ওয়াস রুম, টয়লেট নেই। এতে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কলেজের ভবনগুলো

পানিবন্দি থাকায় অবকাঠামো, চেয়ার, বেঞ্চ নষ্ট হয়ে গেছে। মেঝে সব সময় ভিজে স্যাঁতসেঁতে থাকে। বন্যায় কৃষি ডিপ্লোমা ভবন ধসে পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। শ্রেণিকক্ষের অভাবে তাদের লেখাপড়া বিঘ্ন হচ্ছে। কলেজের শিক্ষক দিনেশ কুমার বলেন, হিজলডাঙা গ্রামসহ কলেজটি প্রায় পাঁচ মাস ধরে পানিবন্দি।

এখনো দোতলা একাডেমিক ভবন, কৃষি ডিপ্লোমা ভবন, মসজিদ ও ছাত্রী নিবাস পানিতে তলিয়ে আছে। শিক্ষকদের অর্থে নির্মিত উত্তর পাশের টিনসেডের একাডেমিক ভবনের টিন অনেক আগেই মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। যা অর্থাভাবে আজও মেরামত করা সম্ভব হয়নি। কলেজটি প্রতিষ্ঠালগ্নে ১০০টি শ্রেণিকক্ষ ছিল। পর্যাক্রমে একাডেমিক ভবন নষ্ট হয়ে বর্তমান ৩০টি শ্রেণিকক্ষ অখ্যাত আছে। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। কলেজের কৃষি ডিপ্লোমা ও বিএমটি শাখা চালু থাকলেও এর ৪২ জন শিক্ষক, কর্মচারী দীর্ঘ ২০ বছর বেতন ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জিএম সাজ্জাত হোসেন বলেন, আমি অধ্যক্ষের দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই কলেজটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। কলেজটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এর উদ্বোধনকালে এখানে একটি হাসপাতাল করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

অজ্ঞাত কারণে তা আজও ফাইলবন্দি রয়েছে। এলাকাটি বন্যাদুর্গত হওয়ায় তিনি এ অঞ্চলে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প স্থাপনের দাবি জানান। গভর্নিং বডির সৈয়দ নাহিদ হোসেন বলেন, আমার ভাই প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর আমার পিতা এ কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৯ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিনিধিরা এ কলেজটি দখল করে সভাপতি হন। যে কারণে কলেজটি ধ্বংসের দিকে চলে যায়। আমি সভাপতি হওয়ার পর থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি কলেজটির সূচনালগ্নের মতো অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত