ঢাকা ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সরিষা খেতে মৌচাষে লাভ বেশি

সরিষা খেতে মৌচাষে লাভ বেশি

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে দিগন্তজুড়ে হলুদ সমারোহে বাড়তি আয়ের অন্যতম উৎস বাণিজ্যিকভাবে মৌচাষ। সংগ্রহিত মধু বিক্রির আয়ের টাকায় চলে ১০-১২টি পরিবারের সংসার। এ সরিষার মৌসুমে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মধু বিক্রয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। আর সরিষা ফুল থেকে মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করায় বাড়ছে সরিষার উৎপাদন। বাড়তি সরিষা উৎপাদন ও মধু সংগ্রহের ফলে একদিকে দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে, অন্যদিকে মধুতে দেশের ভিটামিন-এ এর ঘাটতি পুরণ হচ্ছে। এলাকাবাসী, মৌচাষি, কৃষক ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈরে আমন ধান কাটার পরে বোরো ধানের চারা রোপনের মধ্যবর্তী সময়টাকে কাজে লাগাতে কৃষকেরা আবাদ করেন লাভজনক দানাদার শষ্য সরিষা। মধ্যবর্তী সময়ে ১০০ থেকে ১২০ দিনে এ ফসল ঘরে তোলা যায় বলে সরিষা চাষে উৎসাহী অনেক কৃষকই। চলতি মৌসুমে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৫ হেক্টর বেশি। দিগন্তজুড়ে যেন ছেয়ে আছে হলুদের চাদরে। সকালের মিষ্টি সোনা রোদে আরো চকচক করছে সর্ষে হলুদের দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ। গ্রামীণ জনপদের ফসলের মাঠগুলো প্রকৃতির অপরূপ রূপে সেজেছে। হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ রঙের সরিষা ফুল, পথে ঘাটে মাঠে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধ, আর বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শুধুই হলুদ রঙের সমারোহ। এখানে মৌচাষের জন্য ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ হলুদের সমারোহ কাজে লাগিয়ে ঢালজোড়া ইউনিয়নের বেনুপুর এলাকার এলাকায় মোহাম্মদ আলী নামে এক চাষি পাশের দেওয়ারবাজার বাণিজ্যিকভাবে মৌচাষ করেছেন।

তার মৌচাষে তিনিসহ ৩-৪ জন লোক কাজ করেন। অন্যদিকে পাশের বাঙ্গুরী এলাকায় ঢাকা থেকে প্রশিকা নামে একটি এনজিও এসে মৌচাষ করেছে। তাদের মৌচাষেও ৩-৪ জন লোক কাজ করেন। এছাড়াও আরেকজন মৌচাষি ৩-৪ জন লোকের সমন্বয়ে সরিষা খেতের এক পাশে মৌচাষ করেছেন। সব মিলিয়ে মোট ৩৩০টি মৌবাক্স বসানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তাদের বসানো মৌবাক্স থেকে মৌমাছিরা উড়ে গিয়ে পাশের সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে আবার মৌবাক্সের ভেতর চলে যাচ্ছে। বাক্সের ভিতরে মৌচাকে মধু সংগ্রহ করছে মৌমাছিরা। প্রতিটি বাক্সের ভেতরে ৬ থেকে ৮টি ফ্রেমে মৌচাক থাকে। সপ্তাহখানেক পরপর এসব মৌবাক্স থেকে মৌমাছি সরিয়ে মৌচাক বের করা হয়। পরে মৌচাক একটি স্টিলের ড্রামের ভেতরে নিয়ে ঘুর্ণায়মান যন্ত্রের মাধ্যমে মধু বের করা হয়। এসব মধু সংগ্রহ করে প্লাস্টিকের ড্রামভর্তি করা হয় এবং বাজারজাত করা হয়। সপ্তাহে বাক্স প্রতি ৩ থেকে ৪ কেজি মধু উৎপাদন করা যায়। সে হিসেবে সপ্তাহে ৩৩০ মৌবাক্সে প্রায় ৯৯০ থেকে ১৩২০ কেজি মধু উৎপাদন হয়। বর্তমান প্রতি কেজি মধুর মূল্য ৫০০ টাকা। সে হিসাব অনুযায়ী এ সরিষা মৌসুমে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মধু বিক্রয়ের করার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানকার এসব মধু খাটি, স্বাদ ও গুণগত মান অনেক ভালো হওয়ায় কিনে নিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ স্থানীয় লোকজন।

তাদের সংগ্রহিত মধু বিক্রির আয়ের টাকায় চলে ১০-১২টি পরিবারের সংসার। পাশাপাশি অল্প পুজিতে বেশি লাভবান হওয়ায় অন্যান্য যুবকরাও মৌচাষে আগ্রহী হচ্ছে। অন্যদিকে মৌচাষের কারণে পরাগায়ন বেড়ে যাওয়ায় সরিষা ফসলের উৎপাদন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। ফসলের গুণগত মানও ভালো হয়। আর বাড়তি সরিষা উৎপাদন ও মধু সংগ্রহের ফলে একদিকে দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে, অপরদিকে মধুতে দেশের ভিটামিন-এ এর ঘাটতি পুরণ হচ্ছে। এমনটি জানিয়েছেন সচেতন মহলের লোকজন। স্থানীয় কৃষকদের দাবি, উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে সরিষা চাষে বেশ মুনাফা হয়। আর সরিষা ফুল ও পাতা ঝড়ে পড়ায় জমি বেশ উর্বর হয়। সরিষা কাটার পর ওই জমিতে বোরো ধান আবাদ করলে সারের পরিমাণ কম লাগে। ফলে ধান চাষে উৎপাদন খরচ কমে যায় ও ফলনও হয় ভালো। মৌচাষি মোহাম্মদ আলী বলেন, ৬ বছর ধরে মৌচাষ করে আসছি। মৌচাষে কৃষি কর্মকর্তারা সহযোগিতা করে। এখানে জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত মৌচাষ করা যাবে। ফেব্রুয়ারির ১ম সপ্তাহে মৌবাক্স নিয়ে ফরিদপুরের কালোজিরার মাঠে যাবে। আবার কালিয়াকৈর উপজেলা মেদীআশুলাই লেচু বাগান, মধুপুর রাবার বাগানে মৌবাক্স বসাবো। এরপর যেখানে তীল চাষ হয়, সেখানেও মৌবাক্স বসাবো। কারণ মৌচাষ করেই আমাদের কয়েকটি পরিবারের সংসার চলে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, এখানে এবার লক্ষ্যমাত্রার বেশি সরিষা আবাদ করা হয়েছে। এবার সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ হলুদের সমারোহে ৩টি মৌখামারী মোট ৩৩০টি মৌবাক্স স্থাপন করেছে। সেখান থেকে তারা মধু উৎপাদন ও বিক্রি করছেন। তাদের আয়ও ভালো হচ্ছে। পাশাপাশি স্বল্পপুজিতে বেশি লাভ হওয়ায় অন্যান্য যুবকরাও মৌচাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আর মৌচাষের কারণে পরাগায়ন বেড়ে যাওয়ায় সরিষা ফসলের উৎপাদন বেড়ে যায়। ফসলের গুণগত মানও ভালো হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত