শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির আবাদ হয়ে থাকে। তারমধ্যে একটি ফুলকপি। মৌসুমের শুরুতে আগাম জাতীয় এ সবজির উৎপাদন কম থাকায় দাম ছিল বেশ চড়া। তবে এখন উৎপাদনের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বাজারে ধ্বস নেমেছে। পাইকারিতে প্রতিপিস ৩-৫ টাকা দামে পাওয়া যাচ্ছে। যা মৌসুমের শুরুতে ছিল ৫০-৬০ টাকা পিস। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়- জেলায় ৬০০ হেক্টর জমিতে ফুলকপির আবাদ হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৬ হাজার ২০০ টন উৎপাদনের সম্ভবনা। নওগাঁ সদর উপজেলার নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন ডাক্তারের মোড়।
গত কয়েক বছর থেকে এ মোড়ে ফুলকপির মৌসুমে অস্থায়ী বাজার বসে। গত নভেম্বর থেকে এখানে বেঁচাকেনা হচ্ছে। জানুয়ারি মাসের শেষ পর্যন্ত চলবে। এ বাজারের বৈশিষ্ট হচ্ছে টোলমুক্ত বাজার। পণ্য বেচাকেনার জন্য কাউকে খাজনা দিতে হয় না। এ বাজারটি ভোর থেকে শুরু হয় এবং সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে। বলা যায় ২-৩ ঘণ্টার পাইকারি বাজার।
কৃষকরাও বিক্রি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এ বাজারের ক্রেতা খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়িরা। খুচরা ব্যবসায়িরা কিনে আশপাশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। আর পাইকারি ব্যবসায়িরা ফুলকপি কিনে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে থাকেন। প্রতিদিন এ অস্থায়ী বাজারে লক্ষাধিক টাকার বেচাকেনা হয়ে থাকে।
ফুলকপির দাম কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বাজারে এখন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি উঠেছে। সব ধরনের সবজির দামই কমছে। আগাম ফুলকপি দামে কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। আগাম ফুলকপি উঠানো পর ওই জমিতে কৃষকরা আবারো ফুলকপির আবাদ করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ কৃষকই ফুলকপির আবাদ করায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম নিম্নমুর্খী। কারণ ফুলকপি উঠানো পর ওই জমিতে ইরি-বোরো রোপণ বা অন্য সবজি আবাদ করবেন কৃষকরা। তাই বাধ্য হয়েই এক প্রকার কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কুমুরিয়া গ্রামে কৃষক আওরঙ্গজেব বলেন, এক বিঘা জমিতে ২ হাজার ৭০০ পিস ফুলকপির আবাদ করেছি। প্রতিটি ফুলকপিতে খরচ পড়েছে ৪-৫ টাকা। ১০৫ পিস ফুলকপি বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয়। ব্যবসায়িরা দামই বলে না। বাধ্য হয়ে ৪ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করতে হয়েছে। গত কয়েকদিন আগে ৭-৮ পিস বিক্রি করা হয়। ১০ টাকা পিস বিক্রি হলে কিছুটা লাভ থাকবে। কিন্তু তার নিচে বিক্রি হলে লোকসান। বাচারী গ্রামে ফুলকপি চাষি আলমগীর হোসেন বলেন, প্রতি বিঘাতে খরচ পড়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এক বিঘাতে ৩ হাজার পিস ফুলকপি লাগিয়েছি। বিক্রি উপযোগী হয়েছে। গত সোমবার এ বাজারে কপির সরবরাহ বেশি হওয়ায় ২ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার ১৫০ পিস নিয়ে আসে ৪ টাকা পিস বিক্রি করা হয়েছে।
চকজাফরাবাদ গ্রামের কৃষক সমশের আলী বলেন- আগাম জাতীয় ফুলকপি প্রতিপিস ৫০-৬০ টাকা হিসেবে বিক্রি হওয়ায় ভাল লাভ হয়েছে।
আগামী শেষ হওয়ায় ওই জমিতে আবারো ফুলকপির আবাদ করা হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া ভালো হওয়ায় রোগবালাই কম হয়েছে। এখন হাট-বাজারে প্রচুর পরিমাণ আসার কারণে দাম কমেছে। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগাম ফুলকপির ভাল দাম পেয়ে কৃষকরা লাভবান হয়েছে। তবে শীতকালীন সবজির উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। এতে দাম কিছুটা কমেছে। তবে ফুলকপির পরিমাণ কমে গেলে আবারো দাম বাড়তে থাকবে। কৃষকরা যদি একই ধরনের আবাদ না করে ভিন্ন ভিন্ন আবাদ করে তাহলে ভাল দাম পেয়ে লাভবান হবেন।