ভয়াবহ বন্যা ও স্থায়ী জলাবদ্ধতার মধ্যেও যশোরের কেশবপুর এবং মনিরামপুর উপজেলায় ৩৪৮ কৃষকের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানার ভয়ে অনেকে ভীত হয়ে পড়েছেন। কেশবপুর উপজেলার ১১টি ও মনিরামপুর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন এবং ২টি পৌরসভার দরিদ্র অসহায় অভাবি কৃষক বিভিন্ন খাতে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন। ফলে চক্রবৃদ্ধি হারে ঋণের অংক বেড়ে কয়েকগুণ হয়। ঋণ শোধ না করায় এরই মধ্যে কেশবপুরে ১৬৭ এবং মনিরামপুরে ১৮১ টি সার্টিফিকেট মামলা হয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী না হলেও ঋণ শোধ করতে না পারা কৃষকেরা যে কোন মুহূর্তে গ্রেফতারি পরোয়ানা হতে পারে এই ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘ ৩৬ বছর যাবত উপজেলা দু’টির মানুষ বন্যা ও স্থায়ী জলাবদ্ধ অবস্থায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। নিয়োমিত চাষাবাদ করতে না পারার কারণে কৃষকদের আর্থিক মেরুদন্ড ভেঙে পড়েছে। ফলে সময়মত ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। কেশবপুর উপজেলায় ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১ লাখ ১৭ হাজার ১৭০ টাকা এবং মনিরামপুর উপজেলায় ঋণের পরিমাণ ৬৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৫৮ টাকা। এর মধ্যে সার্টিফিকেট মামলা দায়েরের পর মনিরামপুর উপজেলায় আদায় হয়েছে মাত্র ২ লাখ ৩০ হাজার ২৩০ টাকা। যে কোন মুহূর্তে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী হতে পারে এ ভয়ে অনেকে গরু ছাগল বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ৮০’ দশকের শেষে কেশবপুর ও মনিরামপুরে ভয়াবহ বন্যা ও স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। প্রতি বছর পানি সরাও মানুষ বাঁচাও পানি সরাও কৃষক বাঁচাও এই দাবিতে উপজেলা দু’টির মানুষ আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করলে পানি উন্নয়ন বোর্ড নাম মাত্র নদী খননের নামে প্রকল্প গ্রহণ করে থাকে। ৩৬ বছর যাবত এই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
এ বছর বন্যা পরবর্তি স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিলে কেশবপুর ও মনিরামপুরে বোরো আবাদের লক্ষে কৃষকরা নিজ উদ্যোগে ২৭ বিলের পানি নিষ্কাশনে বিল খুকশিয়ায় ৮ ব্যান্ড স্লুইড গেট, বুড়ুলি বিলের পানি নিষ্কাশনে বুড়ুলি বটতলা, পাথরা পাঁজিয়া বিলের পানি নিষ্কাশনে পাথরা বাজার স্লুইস গেট, বড়েঙ্গা গরালিয়া বিলের পানি নিষ্কাশনে বড়েঙ্গা ব্রিজ ও মজিদপুর এবং বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নের পানি নিষ্কাশনে নুরানিয়া স্লুইস গেটে প্রায় ১১ কোটি টাকার সেচ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সম্পূর্ণ পানি নিষ্কাশন না হলে উপজেলা দু’টির কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক জমিতেও বোরো চাষাবাদ সম্ভব হবে না বলে কৃষকরা জানান। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর কেশবপুর উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মাসিক মিটিংয়ে কৃষকের নামে সার্টিফিকেট মামলার বিষয়ে আলোচনা হলে নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন বলেন, কৃষকরা ব্যাংক ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করায় তাদের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা হয়। তবে এ বছর ভয়াবহ বন্যা ও জলাবদ্ধতার কথা চিন্তা করে বোরো ধান ঘরে না ওঠা পর্যন্ত কোনো কৃষকের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে না।