২০১৮ সালের পদ্মার ভয়াবহ ভাঙন যে শুধু নড়িয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার কাঁচা-পাকা স্থাপনা, বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, ফসলী জমি ও গাছ পালাই গিলে খায়নি গ্রাস করেছে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও। ২০১৮ সাল থেকেই নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ। তাই উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যাশীদের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে ২০২০-২১ অর্থ বছরে নড়িয়া পৌরসভার বৈশাখীপাড়া এলাকায় ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত ৫০ শয্যার নতুন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণকাজ শুরু করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
কিন্তু জেলার একমাত্র আইসিইউ সম্বলিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির নির্মাণকাজ শেষ হলেও মুলফৎগঞ্জে অবস্থিত পুরোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকার কিছু লোকজনের উচ্চ আদালতে রীটের কারণে নতুন আধুনিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চালু করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এতে শুধু নড়িয়াবাসী আধুনিক চিকিৎসাসেবা থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে না ব্যবহৃত না হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। তাই দ্রুত আইনী জটিলতা নিরসন করে জনসাধারণের আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের দাবি নড়িয়াবাসীর। নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর উপজেলার চিকিৎসাসেবা প্রার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে নড়িয়া পৌরসভার বৈশাখীপাড়া এলাকায় নির্মাণকাজ শুরু হয় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট নতুন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
৪ তলার হাসপাতালটির মূল ভবনের পাশাপাশি রয়েছে চিকিৎসক, নার্সদের নতুন আবাসিক ভবনসহ আরও ৫টি ভবন। নতুন হাসপাতালটিতে রোগীদের জন্য আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ সুবিধাসহ মুমুর্ষ রোগীদের জন্য রয়েছে ৫টি আইসিইউ। হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শেষে উদ্বোধনের তারিখ ছিল ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বরে। তবে মুলফৎগঞ্জ এলাকা থেকে পুরাতন হাসপাতালের কার্যক্রম সরিয়ে নেয়ার বিপক্ষে আপত্তি জানিয়ে স্থানীয় একটি পক্ষ উচ্চ আদালতে রীট করে। এতে আটকে যায় নতুন ভবন উদ্বোধনের কার্যক্রম। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরাতন ভবনটির অবস্থান নড়িয়া উপজেলা সদর থেকে সাড়ে ৩ কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীর কোলঘেঁষা কেদারপুর ইউনিয়নের মুলফৎগঞ্জ এলাকায়। ২০১৮ সালে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে হাসপাতালটির ৩ তলার মূল ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পদ্মার ডান তীর রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হলে কোনো রকমে হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে পাশের সরকারি কোয়ার্টারগুলোতে। এছাড়াও হাসপাতালের মূল চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে একটি পরিত্যক্ত ভবনে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নেমে আসে অর্ধেকেরও নিচে। এক্স-রে যন্ত্র থাকার পরেও কক্ষের অভাবে সেবা বন্ধ রয়েছে। প্যাথলজি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার সরকারি কোয়ার্টারে সীমিত পরিসরে চালু থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। স্থান সংকুলান না হওয়ায় লোকবল থাকলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না রোগীদের। স্থানীয় বাসিন্দা শাহলম মাদবর বলেন, নতুন হাসপাতাল নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরেও চালু না হওয়ায় আমরা আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সরকার আমাদের সুবিধার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে হাসপাতাল বানিয়েছে। আমাদের চোখের সামনে আধুনিক ভবন, যন্ত্রপাতি, আইসিইউসহ নানা সুবিধা থাকলেও ভোগ করতে পারছি না। হাসপাতালটি দ্রুত চালু করে আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ করে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে দাবি জানাচ্ছি। শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডা. আবুল হাদি মোহাম্মদ শাহ পরান বলেন, ২০১৮ সালে পদ্মার ভাঙনে মুলফৎগঞ্জের নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এর পর থেকেই উপজেলাবাসীর কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হচ্ছিল। তাই উপজেলাবাসীর উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য বিভাগ পৌরসভা এলাকায় আধুনিক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০২০-২১ অর্থ বছরে কাজ শুরু করে এরই মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করলেও মুলফৎগঞ্জ এলাকার পুরোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকার কিছু লোক জনের উচ্চ আদালতে রীটের কারণে নতুন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চালু করা যাচ্ছে না। উচ্চ আদালতে রীটের রায়ের প্রেক্ষিতে বর্তমানে পুরাতন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই কার্যক্রম চলমান। রীটের নিষ্পত্তি শেষে রায় অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।