প্রতি কলস পানি ১০ টাকা। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ কলস পানি বহন করে চায়ের দোকানে পৌঁছে দিয়ে উপার্জন হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদিনের পরিশ্রমের ফাকে চা, রুটি, কলাসহ নাস্তা বাবদ খরচ আছে প্রায় ২০০ টাকা। দিন শেষে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা নিয়ে ঘরে ফেরে। বাবা নেই প্রায় এক বছর। বৃদ্ধ মা ও প্রতিবন্ধী দুই ভাইবোনের খরচ বহন করতে হয় পানি টেনেই। শারীরিকভাবেই দুর্বল। তাই বেয়ারিং দিয়ে ছোট গাড়ির মতো তৈরি করে তাতে কলস বসিয়ে পানি পরিবহন করে পৌঁছে দেয় দোকানে দোকানে। ঝালকাঠি শহরের ব্যস্ততম কলেজ মোড় এলাকায় সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পানি সরবরাহের কাজ করে শিল্পী। তিনি শহরের পালবাড়ি এলাকার মৃত. পরিমল করুয়ার জ্যেষ্ঠ কন্যা। বয়স ৩০ পেরুলেও সংসারের টানে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হননি জীবন যোদ্ধা শিল্পী। পানি সরবরাহকারী শিল্পী জানান, শহরের পালবাড়ি এলাকার করুয়া (চুন তৈরির কারিগর) বাড়ির বাসিন্দা। বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। পিতা পরিমল চুন তৈরির কাজ করতেন। রোগাগ্রস্ত হয়ে বছর খানেক আগে মারা গেছেন। পিতার অসুস্থতার সময়েই প্রায় দুই বছর আগে দোকানে পানি দেয়ার কাজ শুরু করে। প্রথমে কাঁধে অথবা কোমড়ে কলস বেঁধে পানি দেয়া হতো। তাতে শরীরের ব্যথা ও অসুস্থ হয়ে পড়লে রিকশা অথবা ভ্যান গাড়ির নষ্ট বেয়ারিং সংগ্রহ করে একটি ছোট ট্রলির মতোই গাড়ি তৈরি করা হয়। একটি গাড়িতে ২-৩ কলস পানি বহন করা যায়। কলেজ মোড়ের শতাধিক দোকানে ১০ টাকার বিনিময়ে প্রতি কলস পানি সরবরাহ করা হয়। চায়ের জন্য পুকুরের পানি এবং পান করার জন্য টিউবয়েলের পানি দেয়া হয়। প্রতিটি দোকানে প্রতিদিন ৫-৬ কলস পানি লাগে। পানি টানতে টানতে ক্ষুধা লাগলে চা, রুটি, কলা এসব খাই। ঘরে বৃদ্ধ মা এবং প্রতিবন্ধী দুটি ভাইবোন আছে। সবার দিকে তাকিয়ে নিজেই সারাক্ষণ কাজ করি। বয়স এখন ৩০বছর পেরিয়েছে। কোথাও বিবাহ হয়নি। কলেজ মোড়ের চায়ের দোকানি বেলাল জানান, সকালে এসে পানি দিতে শুরু করে। সারাদিন পানি সরবরাহ করে। প্রথমে কাঁধে বা কোমড়ে বহন করলেও শারিরীক সামার্থ্য না থাকায় বেয়ারিংয়ের গাড়িতে দিতে থাকে। পুকুর এবং টিউবয়েল থেকে আনা প্রতিকলস সরবরাহ বাবদ আমরা (দোকানীরা) ১০ টাকা করে দেই। এতে প্রতিদিন শিল্পীর ৫ থেকে ৬ শত টাকা উপার্জন হয়। কিন্তু সে দোকানে চা, রুটি, কলা, বিস্কুট এসব খেতেই থাকে। তাতে দুইশ’ টাকারও বেশি খরচ হয়। আরেক দোকানি জালাল হোসেন জানান, শিল্পী অভাবী হলেও লোভী না। আমরা অনেক সময় তাকে দিয়ে অন্য দোকান থেকেও প্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয় করাই। লেখাপাড়া না জানলেও তাকে কেউ হিসাবে ঠকাতে পারে না। আমাদের কাছে বিশ্বস্ত লোক হিসেবেই পরিচিত। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারী মিলন জানান, আমাদের সমাজে উপার্জনের ক্ষেত্র হিসেবে ভিক্ষাবৃত্তিসহ কত মানুষ কত কাজ করেন। কিন্তু শিল্পী পরিশ্রম করে টাকা উপার্জন করে। পরিশ্রমী এ নারীকে স্যালুট জানাই।