ঢাকা ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঘনবসতি এলাকার ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ

ঘনবসতি এলাকার ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘনবসতি এলাকার ফসলি জমিতে গড়ে ওঠা ২৬টি ইটভাটার মধ্যে ১৮টিরই ইট পোড়ানোর সরকারি অনুমোদন নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বিশেষ মহলকে ‘ম্যানেজ’ করে ইটভাটাগুলো বহাল তবিয়তে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এবং উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীখ্যাত ম্যানগ্রোভ বাগান উজার করে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ইট পোড়ানো এবং জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহারের দায়ে চলতি মৌমুমে ৬টি ইটভাটার জরিমানা নামমাত্র করা হলেও ইহার কোনো প্রভাব পরেনি অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ রাখতে। অভিযোগ আছে, উপজেলা ও জেলা প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করেই অবৈধ ইটভাটাগুলো বছরের পর বছর ধরে বীরদর্পে অপকর্ম করেই যাচ্ছে। অবৈধ ইটভাটার দাপটে উজার হচ্ছে উপকূলের সবুজবেষ্টনী পাশাপাশি ফসলি জমির মাটির সয়েল যাচ্ছে ইটভাটায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। উজার হচ্ছে ফসলি জমি।

চরফ্যাশন উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে নিয়মণ্ডনীতি উপেক্ষা করে গড়ে ওঠা ২৬টি ইটভাটার মধ্যে ৮টির অনুমোদন রয়েছে। বাকি ১৮টি ইটভাটার কোনো অনুমোদন নেই।

এসব ইটভাটা জিগজ্যাগ দাবি করলেও নেই ইট পোড়ানোর অনুমতি বা লাইন্সেস। অপর ১৮টি ইটভাটায় ৩০-৪০ ফুট ড্রাম চিমনি ব্যবহার করে পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরে নামমাত্র আবেদন ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেডলাইসেন্স নিয়ে ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর ধুম চলছে। অনুমোদিত ৮টি ইটভাটা ছাড়া বাকি ভাটাগুলোর কোনোটিই নিয়ম মেনে পরিচালিত হচ্ছে না। জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটাগুলোর সবই স্থাপিত হয়েছে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার কৃষি জমি এবং ম্যানগ্রোভ বাগানের নিকটবর্তী স্থানে। এসব ইটভায় ইট তৈরির কাজে ব্যবহার হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। এতে সাবার হচ্ছে ফসলি জমি। বেশিরভাগ ভাটাগুলো লোকালয়ে অবস্থিত হওয়ায় এবং ব্যারেল চিমনি ব্যবহার করায় ওইসব এলাকার পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।

শশীভূষণ থানার এওয়াজপুর ইউনিয়নের পশ্চিম এওয়াজপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় নিউ পদ্মা নামের একটি ইটভাটা গড়ে উঠেছে ঘনবসতি এলাকায়। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী ১২০ ফুট চিমনি থাকার কথা থাকলেও ৩০/৪০ ফুটের চিমনির চুল্লি দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে ইট। এছাড়াও ওই ভাটাটি কৃষি জমিতে গড়ে ওঠায় কৃষকের ফসলি জমি কেটে তৈরি হচ্ছে ইট। এতে উজার হচ্ছে ফসলি কৃষি জমি। পাশাপাশি ভাটার চুল্লির ফুলকিতে পুড়ে যাচ্ছে কৃষকের ফসল ও ভাটা সংলগ্ন মানুষের বাড়ির গাছগাছালি। ঘনবসতি এলাকায় ইটভাটা গড়ে ওঠায় বিপাকে পড়েছেন ওই গ্রামের কয়েকশ’ পরিবার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইটভাটা মালিকরা জানান, নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভাটায় ইট পোড়ানোর মৌসুম হিসেবে ধরা হয়।

সাধারণত ১ চিমনির একটি ভাটায় এক মৌসুমে ২৭ থেকে ২৮ লাখ ইট তৈরি হয়। আর দুই চিমনির ভাটায় এক মৌসুমে ৫০ লাখ পর্যন্ত ইট তৈরি করা সম্ভব। এক লাখ ইট তৈরিতে কাঠ লাগে ২ হাজার মণ। সেই হিসাব অনুযায়ী উপজেলার ইটভাটাগুলোতে কোটি কোটি মণ কাঠ পোড়ানো হয়। তবে প্রকৃত হিসেব এর চেয়ে অনেক বেশি বলে জানা যায়।

ইটভাটা মালিকরা কয়েক দফা আবেদন করলেও পরিবেশ আইন বহির্ভূত বিধায় অনেক ইটভাটায় অনুমোদন নিতে পারেননি বলেই কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয়। চরফ্যাসনে ২৬টি ইটভাটার মধ্যে ১৮টি ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোন ছাড়পত্র পায়নি। অনুমোদন বিহীন ইটভাটার মালিকরা কয়েক দফা আবেদন করলেও পরিবেশ আইন বহির্ভূত বিধায় অনুমোদন মেলেনি। জনবসতিপূর্ণ কৃষি জমি, ম্যানগ্রোভ বাগানের নিকটবর্তী অবস্থান এবং টিন, ব্যারেল, ইট, বালি ও সিমেন্ট দিয়ে তৈরি নিষিদ্ধ চুল্লি ব্যবহার করাসহ নানা অনিয়ম বিদ্যমান থাকায় ১৮টি ইটভাটাকে এক বছরের জন্য সীমিত সংখ্যক ইট পোড়ানোর অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তারপরও অনুমোদন বিহীন এসব ইটভাটা এ বছরও উৎপাদন শুরু করেছে বিশেষ মহলকে ‘ম্যানেজ’ করে। যদিও চরফ্যাশন বা ভোলা জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে চরফ্যাশনে বৈধ বা অবৈধ ইটভাটার সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেনি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘনবসতি এলাকার ইটভাটাগুলো স্থপিত হওয়ায় পুড়ছে বসত বাড়ির গাছ-গাছালি। নষ্ট হচ্ছে কৃষকের আবাদি ফসল। কৃষকের খামার। ইট তৈরির কাজে ব্যবহার হচ্ছে কৃষি জমির মাটি। এতে সংকটে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। এছাড়া কালো ধোঁয়ার কারণে মানুষের ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ দেখা দিয়েছে।

ভোলা জেলা পরিবেশ অধিপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. তোতা মিয়া জানান, ইতিমধ্যে চরফ্যাশনের ৬টি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের অভিযান অব্যহত রয়েছে।

নির্বাহী অফিসার রাসনা শারমিন মিথি বলেন, ঘনবসতি এলাকায় ইট পোড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এরইমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অভিযান পরিচালনা করে কয়েকটি ইটভাটার মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। উপজেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে অবৈধ ইটভাটার তালিকা করা হয়েছে। খুব শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত