ঢাকা ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হবিগঞ্জে জেঁকে বসেছে শীত

হবিগঞ্জে জেঁকে বসেছে শীত

তীব্র শীতে জবুথবু হয়ে পয়েছে হবিগঞ্জের মানুষ। নিতান্তই প্রয়োজন কিংবা জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা মানুষের দেখা মিলছে পথে-ঘাটে। জেলার শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনে ভবঘুরে কিংবা শ্রমজীবী, পাহাড় ও গ্রামের নিম্নআয়ের মানুষগুলো ঠান্ডায় কাবু হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে বিপদে আছেন পরিবারের সদস্যরা। শীতের দাপটে শহর, পাহাড় ও গ্রামাঞ্চলের অনেকেই খড়কুটো আর টায়ার দিয়ে আগুনের কুন্ডলী জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। বিভিন্ন এলাকাঘুরে জানা গেছে, কনকনে ঠান্ডায় কষ্টে পড়েছে হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষগুলো। চলছে পৌষ মাস। পাহাড়ি এলাকায় জেঁকে বসেছে শীত। এ শীতে পাহাড়ে বসবাস কঠিন। তীব্রতা বেড়েই চলেছে। এ সময়ে কেউ শীতবস্ত্র নিয়ে আসলে আমরা বেঁচে যেতাম। প্রতিদিনই আমরা শীতবস্ত্রের অপেক্ষায় থাকি।

কেউই আসছে না। শীতবস্ত্রের অভাবে পাহাড়িদের মাঝে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় জরুরীভিত্তিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে শীতবস্ত্র প্রয়োজন। মুঠোফোনে এ প্রতিবেদকের কাছে এ সব কথা জানালেন- জেলার চুনারুঘাট উপজেলার কালেঙ্গা পাহাড়ের কালিয়াবাড়ি ত্রিপুরা পুঞ্জির হেডম্যান বিনয় দেববর্মা। জানা গেছে, জেলার বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে পাহাড়। শত শত বছর ধরে এ পাহাড়ে বসবাস করে আসছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও ছিন্নমূল লোকজন। তারা পরিশ্রমী। লোভী নয়। অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকে। পাহাড়ি বাসিন্দারা পতিত জমিতে লেবু, কাঁঠাল, সবজি, কমলা, মাল্টাসহ বিভিন্নফসল চাষ করে অর্থ উপার্জন করে থাকেন। আর পাহাড়ের চা বাগানের বাসিন্দারা চা-পাতা উত্তোলনের সাথে জড়িত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছে। কিন্তু এ শীতে দরিদ্র পাহাড়িদের পর্যাপ্ত পমিাণে শীতবস্ত্র না থাকায় তারা দুর্ভোগে পড়েছে। পরিবেশপ্রেমিক গাজীউর রহমান সাজু বলেন, গ্রামগঞ্জে শীতের প্রকোপ যেমন। তার চেয়ে পাহাড়ে বহুগুণে শীতের তীব্রতা রয়েছে। এ কারণে পাহাড়িদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, শীতের প্রকোপে তারা ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন। এ সময়ে তাদের খাবারের চেয়ে শীত নিবারণে গরম কাপড়ই বেশি প্রয়োজন। উপযুক্ত সময়ে পাহাড়িদের পাশে তেমন কেউ শীতবস্ত্র নিয়ে দাঁড়াননি। পাহাড়ি শীতার্তরা শীতবস্ত্রের অপেক্ষায়। দ্রুত তাদের চাই শীতবস্ত্র।

একই ভাবে জেলায় পাহাড়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা চা-বাগানে দরিদ্র শ্রমিকরাও শীত নিবারণে শীতবস্ত্র কামনা করছেন। কিন্তু তারাও সময়মত শীতবস্ত্র পাচ্ছে না। কালেঙ্গা পাহাড়ের কৃষ্ণছড়া পুঞ্জির হেডম্যান উমেশ খাড়িয়া বলেন, পাহাড়ে শীত বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় শীতবস্ত্রের খুবই অভাব। এ কারণে শিশু, নারী ও বয়স্করা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শীতবস্ত্র পেলে তাদের বিরাট উপকার হবে। তিনি জানান, কৃষ্ণছড়া, কালিয়াবাড়ি ছাড়াও চুনারুঘাট, বাহুবল ও মাধবপুর উপজেলার পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে পুঞ্জি। এ সবের অনেক পুঞ্জিতেও বসবাসকারী দরিদ্রদের জন্য শীতবস্ত্র প্রয়োজন। দেউন্দি বাগানের বাসিন্দা চা শ্রমিক ভাসানী চৌহান ও কমলা গোয়ালা বলেন, শীত বেড়েই চলেছে। এ কারণে শরীরটা ভাল যাচ্ছে না। শীতের সকালে কাজে যেতে হচ্ছে। তারমধ্যে আবার শীতবস্ত্র নেই। আমাদের ন্যায় শত শত শ্রমিকের শীতবস্ত্রের অভাব রয়েছে। তারা বলেন, লোভ লালসা নেই। চাই শুধু কোন একভাবে বেঁচে থাকতে।

এখানে যদি কেউ শীতবস্ত্র নিয়ে আসতেন, তাহলে আমাদের শীত নিবারণে বিরাট উপকার হতো। মানবাধিকারকর্মী জামাল আহমেদ বলেন, শহরে শীতের তীব্রতা চেয়ে পাহাড়ে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। পাহাড়িদের কাছে দ্রুত শীতবস্ত্র পৌঁছাতে হবে। না হলে তারা নানা রোগে আক্রান্ত হবে। শুধু সরকারিভাবে নয় সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে শীতবস্ত্র নিয়ে দরিদ্র লোজনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি আহবান করেছেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, শীত মানুষকে কাবু করেছে। এ সময়ে গরম কাপড় অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই সময়মত শীতবস্ত্র গ্রাম, শহর ও পাহাড়িদের কাছে পৌঁছাতে হবে। বিলম্ব করা যাবে না। সরকারি ও বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র নিয়ে দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত