কুমিল্লায় গর্ভবতী এক প্রতিবন্ধী নারী নিজের স্বজনদের হারিয়ে গত ২৪ দিন ধরে এক ভিক্ষুকের আশ্রয়ে রয়েছেন। গতকাল রোববার দেবীদ্বার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই ৮ মাসের গর্ভবতী প্রতিবন্ধীকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। বাক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় সে তার নামণ্ডঠিকানা কিছুই বলতে পারছে না। অনেক খোঁজেও সন্ধান মিলছে না তার স্বজনদের। এদিকে চরম শীত ও দারিদ্র্যতার মাঝে গর্ভবতী এই নারীকে নিয়ে বিপাকে আছেন উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের ঘোষঘর গ্রামের ভিক্ষুক আয়েশা বেগম। জানা গেছে, গত ১২ ডিসেম্বর আয়শা বেগম সুবিল বাজারে ভিক্ষা করার সময় প্রায় ২০ বছর বয়সী বাক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী গর্ভবতী মেয়েটির সঙ্গে দেখা হয়। তার খোঁজখবর ও পরিচয় জানতে চাইলে সে কোনো জবাব না দিয়ে আয়শার পেছনে তার বাড়িতে চলে আসে। এরপর থেকে গত ২৪ দিন ধরে ওই নারী আয়শার আশ্রয়েই আছে। ভিক্ষুক আয়শা সামর্থ্য অনুযায়ী তার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে আসছেন। প্রতিবন্ধী নারীটি আট মাসের গর্ভবতী বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। তাদের ভাষ্য, খাতা কলম এগিয়ে দিলে তার নামটা অনেক কষ্টে আকলিমা লিখতে পারলেও আর কিছুই লিখতে পারেনি সে, যার কারণে তার স্বজনদেন সন্ধান মিলছে না। এদিকে ওই নারীর প্রসবকালীন সময় চলে আসায় তার সেবা ও চিকিৎসা নিয়ে বিচলিত হয়ে পড়েছেন ভিক্ষুক আয়শা বেগম। তিনি জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বর্তমানে সে বাবার বাড়িতে আশ্রিত। বাবা নেই, মানষিক প্রতিবন্ধী মা মারা গেছেন প্রায় ৫ বছর পূর্বে। বাবার বাড়িতে থেকে ভিক্ষাবৃত্তি করে নিজের এবং প্রতিবন্ধী ছেলের ভরণ-পোষণ করেন তিনি। এর মধ্যে তার উপর অচেনা এই গর্ভবতী যুবতীর ভরণ-পোষণ ও সার্বক্ষণিক সেবা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। স্থানীয় এক বিত্তবানের সহায়তায় উপজেলা সদর থেকে তার সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে ওষুধ-পথ্য নিয়ে এসেছি। তাকে একলা ফেলে ভিক্ষা করতেও যেতে পারছি না। এ বিষয়ে রোববার দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি হলে বিষয়টি আমার নজরে আসে। শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিনকে নিয়ে আয়শা বেগমের বাড়িতে যাই এবং প্রতিবন্ধী মেয়েটির খোঁজখবর নেই। তাকে শীত বস্ত্রসহ নগদ ১০ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে আসি। এছাড়াও রোববার তাকে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে এসে ওই ভিক্ষুকের মাধ্যমে আরো অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। মেয়েটির প্রসবকালীন সকল চিকিৎসা ও পরবর্তী সময়ে আবাসন এবং জীবনযাপনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাবতীয় সাহায্য দেয়া হবে। একইসঙ্গে তার পরিবারের সন্ধানে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।