দেবহাটা উপজেলার রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র শীতের উষ্ণতায় নতুন রূপে সেজেছে। ইছামতি নদীর তীরে অবস্থিত এই নান্দনিক পর্যটন কেন্দ্রটি স্থানীয় ভ্রমণপিপাসু ও দর্শনার্থীদের জন্য দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ও দেবহাটা উপজেলা প্রশাসন নিরলস কাজ করছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর বিনোদনের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ নিয়ে রূপসী ম্যানগ্রোভ এখন সবার প্রিয় একটি পর্যটন স্পট। প্রতিবছর বিভিন্ন ছুটিসহ আবহাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে গরম বা শীত এবং বিভিন্ন ঈদ ও পূজাকে সামনে রেখে শুরু করে পরবর্তী সময় পর্যন্ত দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকে এ পর্যটন কেন্দ্রটি। ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে একটু বিনোদন আর আনন্দ উপভোগের জন্য দর্শনার্থীরা সদলবলে ভিড় জমান এখানে। বিশেষ করে পর্যটন কেন্দ্রটির কোলঘেঁষে প্রবাহমান ইছামতি নদীর নৈসর্গিক সৌন্দর্য যেন বারবার কাছে টানে পর্যটকদের। পড়ন্ত বিকালে ইছামতির পানিতে অস্তমিত রক্তিম সূর্যের আলোর ঝলকানি, নদীর তীরে প্রিয়জনের সাথে রোমাঞ্চকর কিছু সময় কাটানো, ইচ্ছে হলেই প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে নদীর বুকে নৌকায় ভেসে বেড়ানো, ট্রেইল বেঁয়ে প্রিয়জনের হাতে হাত রেখে ম্যানগ্রোভ বনের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়ানো, সন্ধ্যায় ঝাঁকে ঝাঁকে আবাসস্থলে ফেরা নানা প্রজাতির পাখির কলকাকলি, আর ভাটির টানে নদীর পানি কমে গেলে ইছামতির বুকে জেগে ওঠা বিস্তৃর্ণ বালুরচরে ছুটে বেড়ানো অনেকটা সমুদ্র সৈকতের মতো অনুভূতির সঞ্চার করে সব বয়সের মানুষের মনে।
তাতেই যেন বিমোহিত হয়ে এ পর্যটন কেন্দ্রটির প্রেমে পড়েন দর্শনার্থীরা। ২০১২ পরবর্তী তৎকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড গোলাম মোস্তফা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনম তরিকুল ইসলামের উদ্যোগে সরকারি খাস জমিতে সুন্দরবনের আদলে গড়ে তোলা হয় এই রুপসী ম্যানগ্রোভকে। সে জন্য সুন্দরবন থেকে কেওড়া, গেওয়া, সুন্দরী ও গোলপাতাসহ নানা প্রজাতির চারা এনে এখানে রোপন করা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে এসে রুপসী ম্যানগ্রোভকে নতুন নতুন রূপ দেয়ার কাজ করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান যোগদান করে এখানে বিনোদনের জন্য নানারকম ইভেন্ট তৈরি করেন। ইছামতি নদীর কূল ঘেঁষে এই বিনোদন কেন্দ্রটি সাধারণ মানুষের কাছে বেশি আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য তিনি কাজ শুরু করেন। তিনি এই নান্দনিক বিনোদন কেন্দ্রটিকে আরো রুপময় ও নৈসর্গিকরুপ দিতে বিভিন্ন নতুন নতুন ইভেন্ট, নতুন করে আবাসিক স্থান, ট্রেইলসহ নানারকম কাজ করেছেন। এতো গেলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। দর্শনার্থীদের পছন্দ আর প্রত্যশাকে প্রধান্য দিয়ে রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রের বাড়তি সৌন্দর্য ফুঁটিয়ে তুলতে সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে সাতক্ষীরা জেলা ও দেবহাটা উপজেলা প্রশাসন। তাইতো জেলা শহর থেকে ২৫ কি. মি. দূরের এ পর্যটন কেন্দ্রে ২০ বিঘা জমিতে অনামিকা লেক, শিশুদের জন্য বঙ্গবন্ধু শিশু পার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানা, সভা-সমাবেশের জন্য কনফারেন্স রুম, ফটোসেশনের জন্য আকর্ষণীয় ও ব্যতিক্রমী একাধিক সেলফি পয়েন্ট, লেকের পানিতে প্যাডেল বোট, কফিশপ, নানা ধরনের কৃত্রিম জীবযন্তু, ঘোড়ার গাড়ি, রাত্রিযাপনের জন্য কটেজ ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সীমান্ত এলাকা হওয়া স্বত্বেও এরই মধ্যে বিদ্যুতায়নের পাশাপাশি সেখানে পৌঁছেছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা।
নারী-পুরুষের আলাদা আলাদা নামাজের স্থান, ওয়াশ ব্লক এমনকি দর্শনার্থীদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থাও এখানে রেখেছে দেবহাটা উপজেলা প্রশাসন। দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জেলার মধ্যে রূপসী ম্যানগ্রোভটি ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক অন্যরকম অনুভূতির জায়গা।
জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় এটি আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে আমরা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। তিনি বলেন, সীমান্ত সংলগ্ন হওয়ায় প্রশাসনের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এখানে এসে যেমন বিমোহিত হন ঠিক তেমনি সাধারণ মানুষও এখানে এসে প্রশান্তি পান। সবদিক বিবেচনা করেই ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে এই বিনোদন কেন্দ্রটি এরই মধ্যে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণ গন্তব্য হয়ে উঠেছে।