অর্থ সঞ্চয় করতে গিয়ে ভুয়া সঞ্চয়পত্র, ভুয়া চেক ও জাল স্বাক্ষরের ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন রামগঞ্জ উপজেলার সহস্রাধিক গ্রাহক। জালজালিয়াতির মাধ্যমে গত ৪ বছরে গ্রাহকদের প্রায় ১০ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে রামগঞ্জ উপজেলা ডাকঘর অফিসের উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। সৃষ্ট ঘটনায় আনোয়ার হোসেনকে বিবাদী করে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশনের লক্ষ্মীপুর জেলা ব্যবস্থাপক নেয়ামত উল্যা বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর আদালতে প্রতারণা, চেক ডিজঅনারসহ ৩টি মামলা দায়ের করেছেন। মামলাগুলো বর্তমানে পিবিআই এবং জেলা ডিবি অফিসের কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন। রামগঞ্জ উপজেলা ডাকঘর অফিস সূত্র জানা যায়, রামগঞ্জ পৌরসভার নরিমপুর গ্রামের বাঁশয়ালা বাড়ির মৃত আবু সাইদের ছেলে আনোয়ার হোসেন তৎকালীন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে রামগঞ্জ উপজেলা ডাকঘর অফিসে উদ্যোক্তা হিসেবে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের প্রদানের কাজ শুরু করেন। এর কিছুদিন পরে আনোয়ার হোসেন ব্যাংক এশিয়ার (কেন্দ্রীয় কার্যালয়) অনুমতিক্রমে ডাকঘর অফিসে এজেন্ট ব্যাংকিং চ্যানেলে একাউন্ট খোলার মাধ্যমে সহস্রাধিক গ্রাহক সংগ্রহ করেন। ফাতেমা আক্তার নামের একজন গ্রাহক জানান, আনোয়ার হোসেন রামগঞ্জ ডাকঘর অফিসে বসে মেয়াদকালীন সঞ্চয়পত্র সংগ্রহ ডিপোজিট খোলার জন্য আমাদের উৎসাহ প্রদান করেন। আমি ৫ লাখ টাকা এবং আমার স্বামী কামাল উদ্দিন আহম্মেদ ১০ লাখ টাকা তার কাছে রাখি। এমন অভিযোগ রয়েছে প্রায় অর্ধশত গ্রাহকের। আরেকজন গ্রাহক ইয়াছমিন আক্তার জানান আমি ৪ লাখ ও আমার একজন নিকটাত্মীয়া রাবেয়া বেগমের ৫ লাখ টাকা তার কাছে জমা রাখি অতিরিক্ত মুনাফার লোভে। এখন আমি নিঃশ্ব হয়ে গেছি, আমার স্বামীর সঙ্গে এ টাকা নিয়ে প্রতিনিয়ত ঝগড়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান আমরা আমাদের মেয়াদ পূর্তির টাকা চাইতে গেলে মূল ঘটনা প্রকাশ হয়। অর্থলগ্নিকারী শত শত গ্রাহকরা ছুটে আসেন পোস্ট অফিসসহ ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট শাখায়। এসে জানতে পারেন তাদের একাউন্টে কোন টাকাই জমা হয়নি। আনোয়ারের দেয়া সঞ্চয়পত্রের ফটোকপি, চেকের ফটোকপি কোনোটাই আসল নয়। গ্রাহকদের ধারণা রামগঞ্জ এবং লক্ষ্মীপুর ডাকঘর অফিসের পোষ্ট মাষ্টারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছে আনোয়ারের এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে। বর্তমানে আনোয়ার হোসেন ক্ষুব্দ গ্রাহকদের রোষানল থেকে রেহাই পেতে গা-ঢাকা দিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
রামগঞ্জ উপজেলা ডাকঘর অফিস মাস্টার সিরাজ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, প্রতিদিন গ্রাহকগণ পোষ্ট অফিসে ধর্ণা দিচ্ছেন। আনোয়ারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমার তেমন জানা নেই। আমার পূর্বে রামগঞ্জের দায়িত্বে ছিলেন জসিম উদ্দিন। তার সময়ে আনোয়ার লক্ষ¥ীপুর জেলা পোষ্ট মাষ্টার ইউজার আইডি ব্যবহার করে সঞ্চয়পত্রের ফটোকপি এনে দিতেন গ্রাহকদের হাতে যা বিধিসম্মত ছিল না। রামগঞ্জ উপজেলা ডাকঘর অফিস পরিদর্শক ইমাম মেহেদী ২০২৩ সালে রামগঞ্জে যোগদান করেছেন বলে জানান তিনি। ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশনের লক্ষ্মীপুর জেলা ব্যবস্থাপক নেয়ামত উল্যা জানান, উপজেলা ডাকঘর অফিস থেকে যারা সঞ্চয়পত্র সংগ্রহ করবে মাস শেষে লভ্যাংশের টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক (বাংলাদেশ ব্যাংক) থেকে সরাসরি গ্রাহকের একাউন্টে এসে জমা হবে এমনটাই নিয়ম।
কিন্তু যখন দেখলাম বিভিন্ন মাধ্যম থেকে দুএক মাস গ্রাহকের মোবাইলে ম্যাসেজ যাচ্ছে তখনি নজরে আসে বিষয়টি। পরে খতিয়ে দেখা যায় গ্রাহকদের একাউন্টে কোনো টাকাই জমা হয়নি। সাথে সাথে রামগঞ্জ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানালে কৌশলে আনোয়ার হোসেনের পাসপোর্ট জব্দ করা হলে আনোয়ার পালিয়ে যায়। পরে তার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা করা হয়। মামলাগুলোর ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য আনোয়ারের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে বার বার কল দিয়েও তাকে না পাওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার নরিমপুর গ্রামের বাঁশয়ালা গিয়ে ঘরে কাউকে পাওয়া যায়নি। রামগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আবুল বাশার জানান, সৃষ্ট ঘটনায় রামগঞ্জ থানায় কোনো প্রকার অভিযোগ হয়নি। আদালতের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে থানায় এখন পর্যন্ত কোনো ওয়ারেন্টের কপি হাতে পাইনি। আদালতের ওয়ারেন্টের কপি থানায় আসার সঙ্গে সঙ্গে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।