ঢাকা ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুন্দরবনে বেড়েছে গরানগাছ

সুন্দরবনে বেড়েছে গরানগাছ

সাতক্ষীরা রেঞ্জের সুন্দরবনের দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর দুই পাড়ে সর্বত্রই গরানগাছের ছড়াছড়ি। দীর্ঘ এলাকায় সারি সারি গরান গাছের ঝাড় দেখে হয়তো বলেশ্বর, পশুর, শিবসা, খোলপেটুয়া, কালিন্দি ও মালঞ্চ ইত্যাদি নদীগুলোর দুই পাড়ে। অনেক শক্ত ডাল ও কিছুটা গোলাকৃতি পাতাবিশিষ্ট গরানগাছ ঝাড় আকারে রয়েছে এ সব জায়গায়। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সত্তর দশকে সুন্দরবনে গরান, গোলপাতা, হেতাল, গেওয়া, সুন্দরী কাঠ কাটার অনুমতি দিত বন বিভাগ। নব্বই দশকে শুধু গরান ও গোলপাতা কাটার অনুমতি দেয়া হয়। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর সুন্দরবনে আঘাত হানার পর ওই বছর সরকার গরান ও গোলপাতা কাটা নিষিদ্ধ করে দেয়। এর দুই বছর পর গোলপাতা কাটার অনুমতি দেয়া হলেও গরানের অনুমতি আর চালু করেনি বন বিভাগ। বাওয়ালিদের দাবি, গরান কাঠ না কাটায় বনের গরানসমৃদ্ধ এলাকায় অন্য গাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গরানগাছে বিস্তৃত এলাকা এঁটে থাকায় বনের অভ্যন্তরে বন্য প্রাণীর চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এ কারণে পুনরায় গরান কাটার অনুমতি চান তারা। বাওয়ালি আব্দুল আজিজ বলেন- আমরা সুন্দরবনের নোটাবেকি, দোবেকী, গেওয়াখালী, পুষ্পকাটি, আগুনজালা, দোবেকি, হংসরাজ, নীলকোমল, শোলকমনি এলাকায় গরান দেখেছি প্রচুর। আগে বনে এত গরানের ঝাড় ছিল না। এখন গরান কাটার অনুমতি দিলে বনের কোনো ক্ষতি হবে না বরং বনের অন্যান্য গাছ বাড়বে। বাওয়ালী আনিস বলেন প্রতিবছর গরাণ গাছ নষ্ট হয়ে যায় সুতরাং কাটার অনুমদি দিলে প্রতি বছর কোটি টাকার ও বেশি রাজস্ব পাবে সরকার। বাওয়ালী আয়ুব আলী বলেনল, লক্ষাধিক পরিবার সুন্দরবনের বাওয়ালী পেশায় জড়িত গরাণগাছ কাটার অনুমতি না থাকায় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে তারা। ছোট কুপট গ্রামের বাওয়ালী আবুল মালী বলেন, প্রতি বছর লক্ষ টাকা খরচ করে নৌকা মেরামত করি অথচ গরান কাটার অনুমতি মেলে না প্রতি বছর গরাণ গাছ না কাটলে তা নষ্ট হয়ে যায় তাতে সরকার সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে অন্তত কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়।

এছাড়া ভারতীয় বাওয়ালীরা এসে গাছ কেটে নিয়ে যায়। অথচ আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছি। বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট অফিসার জিয়াউর রহমান বলেন, বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সুন্দরবনে গরানগাছ কাটা নিষিদ্ধ রয়েছে। সুন্দরবনে টহল দেয়ার সময় প্রচুর গরানগাছের বাগান দেখা মিলে। যা অনন্য গাছের বৃদ্ধিতে বাধাগ্রস্থ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দোবেকী ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা ইরফান আলী বলেন, বর্তমানে সুন্দরবনের মাটিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়েছে। আর গরানগাছ লবণসহিষ্ণু হওয়ায় নদী ও খালের পাড়ে নতুন চর জেগে উঠলে অন্য গাছের তুলনায় গরান গাছ বেশি জন্ম নিচ্ছে। সুন্দরবনে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গেওয়া ও গরানগাছের পরিমাণ বেশি।

কোথাও এককভাবে আবার কোথাও মিশ্রভাবে গড়ে উঠেছে গরাণবন। তবে যেসব এলাকায় গরানগাছ রয়েছে, সেখানে একচেটিয়াভাবে গরানগাছেরই রাজত্ব। খুলনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হাসানুর রহমান বলেন, কয়েক বছর ধরে বাওয়ালিরা গরান কাটার অনুমতি চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করে আসছেন। তবে গরানের অনুমতির বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের বিষয়। নির্দেশনা না পেলে গরানের গাছ কাটার অনুমতি দেয়া সম্ভব হবে না। গরান কাটার অনুমতির দাবিতে বাওয়ালী বদরউদ্দীনসহ কয়েকজন বাওয়ালী এরই মধ্যে উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ও করেছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত